নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাংলাদেশে ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা যেভাবে পেট্রলবোমা ও অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়ে মানুষ হত্যা করেছে, শুধু তাদের বিচার হলেই হবে না, যারা এর হুকুমদাতা-অর্থদাতা ও মদদদাতা তাদেরও বিচার হতে হবে। এই অপরাধের যদি বিচার না হয়, তাহলে এ ধরনের অপরাধ আরো ঘটবে বলে উল্লেখ করেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ।
রবিবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ‘অগ্নি সন্ত্রাসের আর্তনাদ’ সংগঠন আয়োজিত ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী বিএনপি-জামায়াতের অগ্নি-সন্ত্রাসীদের বিচার চাই’ শীর্ষক কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
অগ্নিসন্ত্রাসের আর্তনাদ সংগঠনের আহ্বায়ক শাহাদাৎ হোসেন বাবুলের সঞ্চালনায় সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারক এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, পেট্রলবোমা হামলায় আহত সংসদ সদস্য খোদেজা নাসরিন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত প্রমুখ।
এছাড়াও কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন বিএনপি-জামায়াতের বোমা হামলায় নিহত নাহিদের মা রুনি বেগম, নিহত ইউসুফের সন্তান জাহেদুল ইসলাম, নিহত আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী পারভীন, অগ্নি সন্ত্রাসের আর্তনাদ সংগঠনটির সদস্য লিটন মিয়া, আহত সালাউদ্দিন ভূঁইয়া, জমির আলী ও খোকনসহ অনেকেই। এসময় তারা পেট্রলবোমা হামলায় অপরাধীদের কঠোর শাস্তি ও বিচার দাবি করেন।
এসময় তথ্যমন্ত্রী বলেন, অন্য একদল লোক চিঠি ও বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা বসতে বলে। আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য, আমরা সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করবো না। কয়লা ধুলে যেমন ময়লা যায় না, কুকুরের লেজ যেমন সোজা হয় না, ঠিক তেমনি বিএনপি জামায়াতও কখনো ভালো হবে না। এই সন্ত্রাসীদের নির্মূল করতে আমরা বদ্ধপরিকর বলেও জানান তিনি।
তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ২০১৩ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে অগ্নিসন্ত্রাস করা হয়েছে। আর বর্তমানে তারেক রহমানের নেতৃত্বে অগ্নিসন্ত্রাস চলছে। তিনি বলেন, আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে যারা মানুষ মারছে তারা দেশ ও জাতির শত্রু।
চলতি বছরেই পাঁচ শতাধিক গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, অগ্নিসন্ত্রাসীরা কয়েকটি গাড়ি পুঁড়িয়ে মানুষকে ভীতসন্ত্রস্ত করতে চায় কিন্তু তারা জানে না মানুষ এসবে ভয় পায় না। মানুষ এখন ভয়কে জয় করেছে। এই সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িতদের অর্থদাতা, হুকুমদাতা, মদদদাতাদের বিচার না করা হলে এই অগ্নিসন্ত্রাস নির্মূল হবে না। এরা জাতির কলঙ্ক।
কর্মসূচিতে বোমাহামলার শিকার হওয়া প্রত্যেকের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ২০০২-০৩ সালে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে একথা বলে বাংলাদেশ থেকে সাবধান থাকতে বলা হয়েছিল যে এখানে জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছে। বোমা ফাটানোর মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক তৈরি করা ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতি সাধন করাই ছিলো তাদের মূল লক্ষ্য। অতীতে যারা অগ্নি সন্ত্রাস করেছিল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে পুনরায় সেই দিনগুলো দেখতে হতো না। প্রচলিত আইনে নরহত্যাকারীদের বিচার করা এখন গণমানুষের দাবিতে পরিণত হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এসময় বিএনপি-জামায়াতের অগ্নি সন্ত্রাসে সংহতি ও সমবেদনা জানিয়ে শ্যামল দত্ত বলেন, বর্তমানে বিএনপি-জামায়াতের আগুন সন্ত্রাসী থামছে না। এটিকে থামাতে হবে। অগ্নিসন্ত্রাস থামাতে হলে প্রয়োজনে আইন করতে হবে। আমরা আগুনে পুড়ে মানুষ মারার এই অপকর্ম আর চলতে দিতে পারিনা। এসময় গণমাধ্যম ও সাংবাদিক সমাজ থেকেও এটার বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা ও প্রতিবাদ করা জরুরি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশের ৫৩ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রধান বিচারপতির বাড়িতে আক্রমণ হয়েছে। সেই রাস্তায় কত শত মিছিল হয়েছে কিন্তু কেউ এই কাজটি করার সাহস পায়নি। বিএনপি সেই দুঃসাহস দেখিয়েছে। শুধু তাই নয়, হাসপাতালে ঢুকে অ্যাম্মুলেন্স ও মোটরবাইকে আগুন দিয়েছে। গাজায় হাসপাতালে হামলার মতো বাংলাদেশের হাসপাতালেও হামলা করেছে তারা। বিএনপি কর্তৃক দেশের সাধারণ মানুষের মৃত্যুর মিছিল বন্ধ করা এখন সময়ের দাবি।
এসময় নিহত নাহিদের মা রুনি বেগম বলেন, ২০১৩ সালের নভেম্বরে শাহবাগে বাসে আগুন দিলে সেখানে আমার ছেলে পুঁড়ে যায়। পরে হাসপাতালে ভর্তি করানো হলেও ছেলে আর আমার কাছে ফিরে আসেনি। আমি আমার ছেলেকে অনেক কষ্ট করে বড় করেছিলাম। আমার ছেলের তো কোনো দোষ ছিলো না৷ কিন্তু, নির্দয়ভাবে জামায়াত-বিএনপি আমার ছেলের জীবনটা কেঁড়ে নিয়েছে। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর বিচার চাই।
জমির আলী বলেন, ২০১৩ সালে পেট্রোলবোমায় আহত হয়ে এখন মানবেতর জীবনযাপন করছি। বড় পরিবারে সংসার চালানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আমি তো কোনো অপরাধ করিনি। তবে এই অবস্থা কেন আমার? এসময় সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা কামনা করে তার ছেলের একটি চাকরি দাবি করেন।