নিজস্ব প্রতিবেদক :
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে খুশি হলেও সংস্কারের ধোঁয়া তোলা অনেক রাজনৈতিক দলের অ্যাজেন্ডায় রাষ্ট্র সংস্কারের কোনো চিন্তা নেই বলে মন্তব্য করেছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিটির প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান।
আজ শনিবার ‘নাগরিক সমাজ: অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক জাতীয় পরামর্শ সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। রাজধানীর গুলশানে লেকশোর হোটেলে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, নাগরিক সংগঠন ও প্ল্যাটফর্ম, নারী আন্দোলন, মানবাধিকার সংগঠন, সামাজিক উদ্যোক্তা এবং গবেষকদের ঐক্যজোট সিএসও অ্যালায়েন্স এই পরামর্শ সভার আয়োজন করে।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশ গঠন নিয়ে যে সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে, তাতে আমরা আশাবাদী। তবে এ আন্দোলনের পর নিজেদের যাঁরা জয়ী ভাবছেন, তাঁদের অনেকের অ্যাজেন্ডার মধ্যে রাষ্ট্র সংস্কারের চিন্তাচেতনাটাও নেই। বরং বিভিন্নভাবে বৈষম্য জিইয়ে রাখা বা প্রতিষ্ঠিত করার অ্যাজেন্ডা রয়েছে তাদের মধ্যে।’
সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা নিয়ে কাজ করা এনজিওগুলোকে বিগত সরকার চাপে রেখেছে অভিযোগ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অনিয়ম-দুর্নীতি রুখতে কাজ করা বেসরকারি সংস্থাগুলো পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে কাজ করে। অথচ বিগত ১৫ বছর এনজিও এবং সিএসও খাতের ওপর প্রচণ্ড ধরনের চাপ ছিল।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘যখন যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তারাই আমাদের চরম শত্রু ভেবেছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে অসহযোগিতা করেছে। আবার হয়রানির জন্য মিথ্যা মামলাও করেছে। যখন আবার সেই দল ক্ষমতার বাইরে থেকেছে; বিরোধী দলে গেছে, তখন আমাদের কর্মকাণ্ডগুলোকে সাধুবাদ জানিয়েছে।’
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অনিয়ম-দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন, সুশাসনের ঘাটতির চিত্র তুলে ধরে এনজিও এবং সিএসও খাতের সংস্থাগুলো সরকারকে সঠিক কাজটি করতে সহায়তা করে থাকে। কিন্তু বিগত সরকারগুলো সেটা অনুধাবন করতে পারেনি। ফলে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে।
টিআইবির প্রধান বলেন, বিদেশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে চাপে রাখার জন্য বিগত সরকার আইনে পরিবর্তন এনেছিল। ফরেন ডোনেশান রেগুলেশন অধ্যাদেশের ১৪ নম্বর উপধারায় পরিষ্কার বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি দেশের সংবিধান এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিদ্বেষমূলক ও অশালীন কোনো মন্তব্য করেন, তাহলে অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। সংস্থাগুলোকে এর মাধ্যমে সুশাসন ও মানবাধিকার কথা বলার ক্ষেত্রে বাধার দেওয়া হয়েছে।
এ সময় তিনি বিগত সরকারে প্রতি রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীকে ব্যবহার করার অভিযোগ তুলে ধরেন। নাগরিক অধিকার হরণের জন্যও ঠিক একইভাবে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানান তিনি। ক্ষমতায় গেলেই রাজনৈতিক দলের আচরণে পরিবর্তন আসে বলেও উল্লেখ করে দুদক সংস্কার কমিশনের এই প্রধান।
তিনি আরও বলেন, ‘কোনো দল ক্ষমতায় থাকলে একরকম, বাইরে থাকলে আরেক রকম যে ব্যবহার আমাদের সঙ্গে করা হয়েছে, সেগুলো মাথায় রেখে আমরা কাজ করেছি। তবে ছাত্র-জনতা যেভাবে সংগ্রাম করে একটি প্রেক্ষাপট আমাদের সামনে এনেছে, সেই জায়গা থেকে এখন আমরা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি। সংকীর্ণতা, হয়রানি থেকে মুক্তির পথ খুঁজছি।’
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিএসও অ্যালায়েন্সের আহ্বায়ক রাশেদা কে চৌধুরী। এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন পানিসম্পদ এবং বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান; সমাজকল্যাণ এবং নারী ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ; সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও ব্র্যাকের চেয়ারপারসন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান; বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ।