নিজস্ব প্রতিবেদক :
সাভারের আশুলিয়ায় টানা কয়েকদিন শ্রমিক অসন্তোষের পর কাজে ফিরতে শুরু করেছেন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। শনিবার সকালে আশুলিয়ার নরসিংহপুর, নিশ্চিন্তপুর, জামগড়া, ডিইপিজেড, পলাশবাড়ীসহ যেসব কারখানায় বিক্ষোভ চলছিল সেসব কারখানার শ্রমিকরা আজ শনিবার কাজে যোগ দিয়েছেন। এতে অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে সাভার ও আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষ পরিস্থিতি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরাপত্তা জোরদার করেছে। আশুলিয়ার বিভিন্ন সড়ক ও কারখানার সামনে সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা টহল দিচ্ছেন। দুপুর পর্যন্ত কোথায় অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
তবে কয়েকটি কারখানায় শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ রেখে তাদের বেতন, হাজিরা বোনাস, ভাতা বৃদ্ধিসহ কয়েকটি দাবি জানিয়েছে। এসব কারখানার শ্রমিকরা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কাজ করবেন না বলে জানান। অনাকাঙ্খিত ঘটনার আশঙ্কায় এসব কারখানায় ছুটি দেওয়া হয়। এরই মধ্যে ১৭টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, এখন পর্যন্ত ১৭টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। কারখানার সামনে সন্দেহভাজন তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তিনি জানান, সকালে কারখানাগুলোতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ছিল। তবে দাবি পূরণ না হওয়ায় কিছু কারখানার শ্রমিকরা কাজ করেননি। পরে সেগুলো ছুটি দেওয়া হয়।
এর আগে শুক্রবার শিল্প এলাকায় শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নেতারা। বৈঠকে পোশাক খাতে অস্থিরতা নিরসনে একগুচ্ছ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শুক্রবার মধ্যরাতে সাভার ও গাজীপুরে শুরু হয়েছে যৌথ বাহিনীর ‘ব্লক রেইড’। প্রয়োজনে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, শ্রমিক বিক্ষোভের নামে আর নৈরাজ্য করতে দেওয়া হবে না। ভাঙচুর, নাশকতায় জড়ালে কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করবে পুলিশ। এরই মধ্যে সাভারে নেওয়া হয়েছে বাড়তি পুলিশ ফোর্স। আজ শনিবার কারখানা খোলার পর যাতে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে যৌথ বাহিনী।
শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে গত বৃহস্পতিবার আশুলিয়ায় বন্ধ ছিল ১২৯টি কারখানা। বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম জানান, শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি নিয়ে শুক্রবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি বিকেলে শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। অস্থিরতা নিরসনে শ্রমিক ও মালিক কর্তৃপক্ষ নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করতে একমত হয়েছে। বৈঠকে শ্রমিক নেতারা বলেন, কিছু কারখানায় বেতন-ভাতা নিয়ে সমস্যা রয়েছে। পাশাপাশি কারখানায় নতুন শ্রমিক নিয়োগ দেওয়ার দাবি করেন তারা। এ সময় কারখানা মালিকরা তাদের বলেন, নতুন শ্রমিক নিয়োগ করা যাবে, তবে আগে শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি শান্ত করতে হবে।’
পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন্স) রেজাউল করিম বলেন, পোশাক খাত আমাদের অর্থনীতির লাইফ লাইন। এ খাত ঘিরে যারা অস্থিরতা তৈরি করছে, তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এরই মধ্যে কিছু কারখানায় হামলা, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের ধরতে ব্লক রেইড ও যৌথ অভিযান চলছে।
পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, যারা শিল্পাঞ্চলে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছে, তাদের তালিকা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেকের নাম পেয়েছে এবং তাদের ধরতে অভিযান চলছে। এ ছাড়া আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের ২০০’র বেশি সদস্যকে সাভারে নেওয়া হয়েছে।
সাভারে অভিযানে শুক্রবার পর্যন্ত অন্তত ১৭ জনকে আটক করা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে যৌথ বাহিনী তাদের আইনের আওতায় নেয়। এ ছাড়া গাজীপুরে পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে অস্থিরতা উস্কে দেওয়ার অভিযোগে একজনকে আটক করা হয়েছে। কোনাবাড়ী বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক হন তিনি।
কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম জানান, ‘বেশ কয়েক দিন ধরে গাজীপুরের শিল্প এলাকা, টঙ্গী ও কোনাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় পোশাক তৈরি কারখানায় বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কোনাবাড়ী বিসিক শিল্পনগরী এলাকার নিরাপত্তাকর্মী মনিরুজ্জামানকে আটক করা হয়েছে।’