নিজস্ব প্রতিবেদক :
জনগণ বাংলাদেশ পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত জনতার পুলিশ হিসেবে দেখতে চায়। বিশিষ্টজনরা এ মতামত দিয়েছেন।
পুলিশ সপ্তাহ ২০২৫ উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে “নাগরিক ভাবনায় জনতার পুলিশ : নিরাপত্তা ও আস্থার বন্ধন” শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ বক্তব্য উঠে এসেছে।
ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ বাহারুল আলম বিপিএম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক ছিলেন ড. সলিমুল্লাহ খান।
বিশিষ্ট নাগরিকদের মধ্যে আলোচনার অংশ নিয়েছেন নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবির, বিশিষ্ট শিল্পপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিস অ্যান্ড কনফ্লিক্ট স্ট্যাডিজ বিভাগের অধ্যাপক সাজ্জাদ সিদ্দিকী, বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য অধ্যাপক চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা. জাহেদ উর রহমান, সাবেক আইজিপি মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা। সমাপনী বক্তব্য রাখেন নাগরিকদের সাথে মতবিনিময় সভা সংক্রান্ত উপ-কমিটির সভাপতি ও স্পেশাল ব্রাঞ্চের অতিরিক্ত আইজি গোলাম রসুল।
মতবিনিময় সভায় শিক্ষক, সাংবাদিক, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, লেখক, খেলোয়াড়, সঙ্গীত শিল্পী, চলচ্চিত্র নির্মাতা, অর্থনীতিবিদ, সাহিত্যিক, শ্রমিক নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিকগণ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারি মোঃ খোদা বখস চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাগণ, সকল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপার উপস্থিত ছিলেন।
ড. সলিমুল্লাহ খান বলেন, পৃথিবীতে যত রাষ্ট্র আছে সেখানে পুলিশ আছে। পুলিশ সমাজেরই অংশ। আমাদের দেশে পুলিশের জনপ্রিয়তায় যে ভাটা পড়েছে তা উদারচিত্তে আলোচনা হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, পুলিশের সাথে জনগণের দূরত্বের গোড়ায় যেতে হবে। জনগনের বিপক্ষে পুলিশকে দাঁড় করানো যাবে না।
ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ বাহারুল আলম বিপিএম বলেন, পুলিশের প্রতি জনসাধারণের দৃষ্টিভঙ্গি তখনই ইতিবাচক হয়, যখন তারা দেখে এই বাহিনীটি কেবল আইন প্রয়োগ করছে না, বরং জনগণের অধিকার রক্ষা ও মানবিক মূল্যবোধ বজায় রাখার দায়িত্ব গ্রহণ করছে। “জনতার পুলিশ” মানে শুধু একটি পরিচয় নয়-এটি একটি দর্শন, যা নিরাপত্তার সঙ্গে সঙ্গে জনমনে আস্থা, শ্রদ্ধা ও সম্মান গড়ে তোলে।
তিনি বলেন, ইতিহাস আমাদের শিখিয়েছে- অস্ত্র নয়, জনগণের আস্থা অর্জনই পুলিশের প্রকৃত শক্তি। পুলিশ যদি সত্যিকার অর্থে জনগণের পাশে থাকে, তবে তারা “ভয়ের প্রতীক” নয়, বরং হয়ে ওঠে “ভরসার আশ্রয়”।
তিনি বলেন, তাই পুলিশ হতে হবে এমন, যারা থাকবে জনগণের পাশে, জনগণের হয়ে, জনগণের জন্য।
নুরুল কবির বলেন, রাষ্ট্র যখন নিপীড়ক হয়ে ওঠে তখন পুলিশকে জনতার পুলিশ হতে দেয় না। তিনি বলেন, পুলিশকে জনতার পুলিশ হতে হলে কতগুলো বিষয় মাথায় রাখতে হবে। ন্যায় বা অন্যায় দেখার মত বুদ্ধিমত্তা থাকতে হবে।
সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। পুলিশকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে।
সাজ্জাদ সিদ্দিকী বলেন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় পুলিশের অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে। পুলিশ যদি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে তাহলে পুলিশের ইমেজ বাড়বে।
অধ্যাপক চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস বলেন, পুলিশ যদি সত্যের পথে থাকে তাহলে ‘নতুন বাংলাদেশে’ তাদের আস্থার জায়গা হবে। তিনি বলেন, পুলিশকে অসহায় মানুষের মাঝে দাঁড়াতে হবে।
ডা. জাহেদ উর রহমান বলেন, রাজনৈতিক দলের অন্যায় আদেশ পালন থেকে বিরত থাকার জন্য পুলিশ সদস্যদেরকে লড়াই করতে হবে।
সাবেক আইজিপি আবদুল কাইয়ুম বলেন, আমরা সবাই স্বাধীন হতে চাই। কিন্তু স্বাধীনতা ভালো লাগে না। অনেকে গোলামী করতে চায়। এ দ্বিচারিতার অবসান হওয়া উচিত। এর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
নুরুল হুদা বলেন, রাজনৈতিক নেতৃত্বকে পুলিশকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।
তিনি বলেন, পুলিশের সাথে জনগণের সম্পর্ক “ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া”। এ সংস্কৃতি বদলাতে হবে।
সমাপনী বক্তব্যে গোলাম রসুল বলেন, আমরা জনতার মুখোমুখি থাকবো না, পাশাপাশি থাকবো। আমরা সাধারণ মানুষের কাছে যেতে চাই; জনগণের পুলিশ, সাধারণ মানুষের পুলিশ হতে চাই।