নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানীতে নয় দিনব্যাপী শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা মহোৎসব শুরু হচ্ছে আগামী ৭ জুলাই। সনাতন সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় এই উৎসবের আয়োজন করছে বরাবরের মতো ইসকন স্বামীবাগ আশ্রম। বণার্ঢ্য শোভাযাত্রা, বিশ্বশান্তিকল্পে অগ্নিহোত্র যজ্ঞ, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পদাবলি কীর্তন, ভাগবতীয় আলোচনা, শ্রীচৈত্রন্যচরিতামৃত পাঠ, ধর্মীয় নাটক ও হরিনাম সংকীর্তনসহ নানা কর্মসূচিতে সাজানো হয়েছে এই রথযাত্রা মোহৎসব।
শুক্রবার ইসকনের স্বামীবাগ আশ্রমে শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা মহোৎসব-২০২৪ উপলক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে উৎসবের বিস্তারিত তুলে ধরে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন)। এবারের রথযাত্রায় অন্তত ৩ লক্ষ ভক্তের সমাগম ঘটবে বলে আশা করছেন ইসকনের সংগঠকরা।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসকন বাংলাদেশের সভাপতি শ্রী সত্যরঞ্জন বাড়ৈ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্রী জগৎগুরু গৌরঙ্গ দাস ব্রহ্মচারী, ইসকন জাগ্রত ছাত্র সমাজের পরিচালক শ্রী দ্বিজমণি গৌরাঙ্গ দাস ও শ্রী জয় মহাপ্রভু দাস ব্রহ্মচারীসহ অনেকে। এছাড়া সভায় ভার্চুয়াল যুক্ত হন ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ও ইসকন স্বামীবাগ আশ্রমের অধ্যক্ষ শ্রী চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও কালবেলা সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, টিভি চ্যানেল নিউজ২৪ এর নির্বাহী পরিচালক রাহুল রাহা, সনাতনী সাংবাদিকদের সংগঠন স্বজনের সভাপতি তপন বিশ^াস ও সাধারণ সম্পাদক অনিমেষ করসহ নেতৃবৃন্দ ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ইসকনের সভাপতি সত্যরঞ্জন বাড়ৈ বলেন, এবারও উৎসবমুখর পরিবেশে রথযাত্রা হবে। শোভাযাত্রায় পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী নিয়োজিত থাকবে। মহোৎসব সফল করতে সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া শোভাযাত্রাসহ উৎসব উপলক্ষে নিরাপত্তায় নিজস্ব প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত থাকবে। তিনি বলেন, রথযাত্রায় সব ধর্ম- বর্ণের মানুষ অংশ নিতে পারবেন।
অধ্যক্ষ শ্রী চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী রথযাত্রা মহোৎসব এবং শোভাযাত্রায় অংশ নেয়ার জন্য সনাতন সম্প্রদায়সহ ভক্তদের প্রতি অনুরোধ জানান। সাংবাদিকদের সার্বিক সহযোগিতাও কামনা করেন তিনি।
মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, ৭ জুলাই ইসকন স্বামীবাগ আশ্রমে সকাল ৮টায় বিশ্ব শান্তি ও মঙ্গল কামনায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞের মধ্য দিয়ে রথযাত্রা মহোৎসবের শুভ সূচনা ঘটবে। দুপুর দেড়টায় আলোচনা সভা শেষে আড়াইটায় রথের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার উদ্বোধন করা হবে। আলোচনাসভায় প্রধান অতিথি থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। শোভাযাত্রা উদ্বোধন করবেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। এছাড়া অনুষ্ঠানে স্থানীয় সংসদ সদস্য সাঈদ খোকন উপস্থিত থাকবেন। ১১ ও ১২ জুলাই আলোচনাসভায় অতিথি থাকবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন ও ভ’মিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ।
রথের শোভাযাত্রা স্বামীবাগ আশ্রম থেকে শুরু হয়ে জয়কালী মন্দির- ইত্তেফাক মোড়- শাপলা চত্বর-দৈনিক বাংলা মোড়-রাজউক ভবন-গুলিস্তান- পুলিশ হেডকোয়ার্টার-সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল-হাইকোর্ট মাজার-দোয়েল চত্বর-রমনা কালী মন্দির-টিএসসি মোড়-জগন্নাথ হল ও পলাশী হয়ে শ্রীশ্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে গিয়ে শেষ হবে। ১৫ জুলাই বিকেলে উল্টো রথের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা একই পথে ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে স্বামীবাগ আশ্রমে আনা হবে।
প্রতি বছর চন্দ্র আষাঢ়ের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে শুরু হয় শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা। এর ৯ দিনের মাথায় হয় উল্টো রথযাত্রা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস- জগন্নাথ দেব হলেন জগতের নাথ বা অধীশ্বর। জগৎ হচ্ছে বিশ্ব আর নাথ হচ্ছেন ঈশ্বর। তাই জগন্নাথ হচ্ছেন জগতের ঈশ্বর। তার অনুগ্রহ পেলে মানুষের মুক্তিলাভ হয়। জীবরূপে তাকে আর জন্ম নিতে হয় না। ভগবানের শ্রীবিগ্রহ দর্শনের মাধ্যমে আমরা তাঁর করুণাদৃষ্টি লাভ
করি। তাই সাধারণত ভক্ত ভগবানকে দর্শন করার জন্য মন্দিরে যান । কিন্তু যারা কখনো মন্দিরে যাওয়ার সুযোগ পান না, রথযাত্রায় ভক্তবিরহ-কাতর ভগবান জগন্নাথদেব স্বয়ং মন্দির থেকে রাজপথে বেরিয়ে আসেন তাদের দর্শন দানের জন্য। তিনি তাঁর দুই বাহু সামনে প্রসারিত করে সবাইকে তার কৃপা লাভের জন্য আহ্বান করেন এবং করুণাসিক্ত অপলক নেত্রে তিনি সকলের প্রতি তাঁর করুণাদৃষ্টি দান করেন। তাই সম্প্রীতির পাশাপাশি রথযাত্রা ভগবানের করুণা লাভের উৎসব। এ বিশ্বাস থেকেই ভক্তরা রথের ওপর জগন্নাথ (ভগবান শ্রীকৃষ্ণ), তার বোন শুভদ্রা ও ভাই বলরামের প্রতিকৃতি স্থাপন করে সেই রথ টেনে নিয়ে যাবেন এক মন্দির থেকে অন্য মন্দিরে। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বসবে মেলা। সেখানে দূর-দূরান্ত থেকে আসবেন ভক্ত ও দর্শনার্থীরা।