নিজস্ব প্রতিবেদক :
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিকের অতিরিক্ত কমিশনার মো. মুনিবুর রহমান বলেছেন, রমজানে দুপুর সাড়ে তিনটায় অফিস ছুটির পর ইফতারের আগ পর্যন্ত ঢাকার সড়কে তীব্র যানজট দেখা যাচ্ছে। মূলত বাণিজ্যিক ভবনের অব্যবস্থাপনায় এ ধরনের যানজট সৃষ্টি হচ্ছে বলে তিনি জানান।
বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি ট্রাফিকের অতিরিক্ত কমিশনার এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রুটগুলোয় সড়কের পাশে গাড়ি পার্কিং করা হয়। যা সড়কের প্রশস্ততা কমিয়ে দেয় এবং যানবাহন চলাচল বাধাগ্রস্ত করে। রমজানের শুরু থেকেই ট্রাফিক বিভাগ পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। সড়কের পাশে অযাচিত পার্কিং না করতে নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
মো. মুনিবুর রহমান বলেন, নির্ধারিত বাস স্টপেজে না দাঁড়িয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের টার্নিং পয়েন্টে যাত্রীরা দীর্ঘক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। এতে করে সড়কের যানবাহনে চলাচলের ক্ষেত্রে বিঘ্ন ঘটায়। এতে যানবাহনের মুভমেন্ট অনেক কমে যায়। এজন্য যাত্রীদের গণপরিবহনে চলাচলের ক্ষেত্রে নির্ধারিত স্টপেজে যেয়ে অপেক্ষার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। অনেক স্টপেজে যাত্রী না থাকলেও গণপরিবহনগুলো দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান নেয়। এতে যাত্রীদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ে এবং যানজট তৈরি হয়।
অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ডিএমপির পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন ইউনিট থেকে যানবাহন অযাচিতভাবে ডিএমপি এলাকায় প্রবেশ করে যানজট তৈরি করে। ডিএমপির ট্রাফিক সদস্যদের এ বিষয়ে কড়াভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ভারি যানবাহনের জন্য ডিএমপি এলাকায় প্রবেশের নির্দিষ্ট সময়সীমা আছে, কিন্তু অনেক সময় সে সময়সীমা না মেনে চলার চেষ্টা করা হয়, যা যানজট তৈরি করে। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই ভারি যানবাহন চলাচলের বিষয়টি মেনে চলতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন সময় ঢাকা শহরের ছোট, বড় সড়কে মেরামতের কাজ চলছে। জনসাধারণের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে রমজান মাসে এসব সড়ক চলাচল উপযোগী করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে চিঠি চালাচালিও করা হয়েছে।
ডিএমপির এ কর্মকর্তা বলেন, অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক/মহাসড়কের পাশে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান আছে যা সংখ্যায় অনেক বেশি। কিন্তু রাস্তার মাঝে আইল্যান্ড ভাঙা থাকায় অনেক ক্রেতাসাধারণ ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হচ্ছেন। যানবাহনের চলাচল ও গতি এতে ভীষণভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
রমজান মাস ঘিরে কোনো ব্যবসায়ী সড়কে যেন ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালিত করতে না পারে, এজন্য রমজানের শুরু থেকেই ট্রাফিক বিভাগ কঠোর। প্রথমবারের মতো ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের নির্দেশনায় ডিএমপির ক্রাইম বিভাগ ট্রাফিক বিভাগকে সহযোগিতা করছে। এতে ট্রাফিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
যেখানে সেখানে বাস দাঁড়িয়ে থাকার বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হয় না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বাস মালিক ও চালকদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলছি এ বিষয়ে। রমজান মাস ছাড়াও সবসময়ই আমরা টার্মিনাল ও বিভাগভিত্তিক সব স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলছি। পিক আওয়ারে সিগন্যালে জমে থাকা গাড়িগুলো দ্রুততম সময়ে রিলিজ করা চ্যালেঞ্জ হয়ে যায়। সে কারণে ওই সময় ট্রাফিক সদস্যদের মুভমেন্ট বেশি থাকে। এ সুযোগে অনেক সময় গণপরিহনগুলো ডিসিপ্লিনের বাইরে চলে যায়, কিন্তু বিষয়গুলো যখনই আমাদের নজরে আসে আমরা ব্যবস্থা নিতে চেষ্টা করি।
সড়কে আড়াআড়ি করে গণপরিবহনগুলোকে চলাচলে প্রতিযোগিতা করতে দেখা যায়, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিশেষ করে রমজান মাসে সড়কে এই শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ট্রাফিক সদস্যদের নির্দেশনা দেয়া আছে। যত্রতত্র পার্কিং বা সড়কে নির্মাণসামগ্রী রাখাসহ কোনো অনিয়ম থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
গুলিস্তান থেকে পুরান ঢাকা যাওয়ার সড়কে রাতভর যানজটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মিটফোর্ড, বাবুবাজার ব্রিজ এলাকায় বড় বড় আড়ত রয়েছে। চাল, ফল, ওষুধসহ বিভিন্ন আড়ত রয়েছে, তাই এলাকাটি এমনিতেই ব্যস্ত। এ সড়কে বিভিন্ন স্পটে ফুটওভার ব্রিজ দরকার, আর যেগুলো আছে সেগুলো ঠিকঠাক ব্যবহৃত হচ্ছে না। এখন ওই এলাকার ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করতে দিতে হবে, কিছু করার নেই। তবে মানুষকে আরো সচেতন হতে হবে, আমরা সর্বোচ্চ ইউটিলিটি দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি।
আসন্ন ঈদ উপলক্ষে মার্কেটগুলোয় ভিড় বাড়তে শুরু করেছে, এ বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, রমজানের প্রথম থেকেই মার্কেটগুলোয় আমরা কথা বলেছি। যখন ভিড় বেশি থাকবে, তখন কোন পয়েন্টে পার্কিং হবে, অতিরিক্ত গাড়িগুলো কোথায় নেয়া হবে সেসব বিষয়ে আমাদের কথাবার্তা হয়েছে। ব্যস্ততম এলাকায় কমিউনিটি ট্রাফিক ডেভলপ করা হয়েছে। আশা করি সৃশৃঙ্খলভাবে নগরবাসীকে নির্বিঘ্নে যাতায়াত উপহার দিতে পারব।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের এফডিসি র্যাম্প চালুর পর এ এলাকায় যানজট বেড়েছে, এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গতকাল (বুধবার) র্যাম্পটি চালু হয়েছে, আমি নিজে থেকে যান চলাচলের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেছি। গাড়ি ছাড়ার ক্ষেত্রে আমাদের প্রায়োরিটি জোন আছে। কোন সময় কোন দিকে গাড়ি ছাড়লে বেস্ট হবে সেটি বিবেচনা করতে হয়। যেহেতু এটি নতুন চালু হয়েছে, সেটা সমন্বয় করে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বিষয়টি আয়ত্বে আনতে হবে। প্রথমদিকে ফার্মগেট এলাকায় একটা চাপ সৃষ্টি হয়েছিল, যা আমরা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। তাই অন্য র্যাম্প এলাকার মতো অভিজ্ঞতার আলোকে এ এলাকার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সুষ্ঠুভাবে করতে পারব বলে আশা করছি।
স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক বাতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকায় ১১০ ইন্টারসেকশনে বাতি রয়েছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র গুলশানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে একটি স্বয়ংক্রিয় বাতি সচল রয়েছে। অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সমন্বয় করে সকল সিগন্যালেই এ বাতির অটোমেশন সিস্টেমের কাজ চলমান রয়েছে। শিগগিরই সবগুলো চালু হবে।