ডেস্ক রিপোর্ট :
এবার পবিত্র হজ পালন করতে গিয়ে এক হাজারের বেশি মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। যাদের বেশিরভাগই মারা গেছেন তীব্র গরমে। অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন দুই হাজারের বেশি হজযাত্রী। চমকে দেওয়া তথ্য হলো, মৃতদের বেশিরভাগই আরব অঞ্চলের। যাদের এমন শুষ্ক আবহাওয়ার মধ্যেই সাধারণত থাকতে হয়।
বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, ২০২৩ সালের চেয়ে এবারের হজে মৃত্যু ৭০০ বেশি। সৌদি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কিছু হজযাত্রী বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছেন। বেশিরভাগ মারা গেছেন অত্যধিক তাপমাত্রায়।
এবার যেসব হজযাত্রী মারা গেছেন তাদের অর্ধেকের বেশি বৈধ নয় বলেও দাবি সৌদির। এখন পর্যন্ত এ বছর হজে মিশরের নাগরিক সব থেকে বেশি মারা গেছেন। দেশটির ৬৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। সৌদি কর্তৃপক্ষ বলছে, এদের মধ্যে ৬৩০ জনই অবৈধ। বৈধভাবে না আসার কারণে গরমের বিশেষ সরকারি পরিষেবা গ্রহণ করতে পারেননি এসব হাজি। আর এবার গরম বেশি হওয়ায় সহ্য করাও কঠিন হয়ে যায় তাদের জন্য।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, অ্যাম্বুলেন্স না আসা পর্যন্ত তিনি মরদেহগুলো মক্কার ঠিক বাইরে মিনার কাছে রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখেছেন। সেগুলো সাদা ইহরাম কাপড়ে ঢাকা ছিল।
জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ ধরনের মৃত্যু আগামী দশকগুলোতে হজপ্রত্যাশীদের জন্য কী অপেক্ষা করছে তার আভাস দিচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা না করতে পারেলে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
চাঁদের হিসাবে পবিত্র হজ পালনের সময় নির্ধারিত হয়। এবার এমন সময় হজের সূচি পড়েছে, যখন সৌদি আরবে তাপমাত্রা ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে। কিন্তু সৌদি সরকার বলেছিল যে, হজের সময় সৌদিতে ৪৪ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা উঠতে পারে।
সৌদি আবহাওয়া দপ্তর বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মক্কা ও মদিনায় গড় তাপমাত্রা বেড়েছে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস। ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের একটি হজ।
ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী, প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক ও সামর্থ্যবান মুসলিম নারী-পুরুষের জন্য জীবনে অন্তত একবার হজ করা ফরজ। এবার ১৮ লাখের বেশি মানুষ হজে অংশ নেন।
পবিত্র হজ শুরুর আগে অবৈধভাবে যাওয়া এবার হাজারো বিদেশিকে বের করে দেয় সৌদি সরকার। তবে অনেকেই থেকে যান। তাঁরা লুকিয়ে হজ করেন। হজযাত্রীদের গরমে স্বস্তির জন্য বিশেষ অনেক ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। বৈধ না হওয়ায় অনেকেই এই পরিষেবা নিতে পারেননি। তারা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রবেশ করতে পারেননি। এ ছাড়া নিরাপত্তাকর্মীরাও এসব অবৈধ বিদেশিদের খুঁজতেন। দেখলেই ধরার চেষ্টা করলে এরা দৌড়ে লুকিয়ে যেতেন। এই গরমে এভাবে লুকিয়ে থাকতে থাকতে অনেকেই ক্লান্ত হয়ে যান।
এই গ্রীষ্মে জলবায়ু পরিবর্তন মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোতে ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে। কুয়েতে গত বুধবার বিদ্যুতের চাহিদা বেশি থাকায় লোডশেডিং দেখা দিয়েছে। আলজেরিয়াতেও গত মাসে পানি সংকটের কারণে বিক্ষোভ হয়েছে। এ ছাড়া ইরাক, লেবানন, ইরাক ও সিরিয়ার মতো দেশগুলোতেও দেখা দিয়েছে বিদ্যুৎ সংকট।