নিজস্ব প্রতিবেদক :
ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে সরকার পতনের ২৭ দিনের মাথায় পদত্যাগ করলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) তিনি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠান। এদিনই তার পাঠানো পদত্যাগপত্র গৃহীত ও কার্যকর হয়েছে। সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব (চলতি দায়িত্ব) ড. হাফিজ আহমেদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৭৪(২)(ঘ) অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রপতির নিকট স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্পীকার পদ হতে পদত্যাগ করেছেন এবং তাঁর পদত্যাগ পত্রটি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ১৮ ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ/২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ তারিখে গৃহীত হয়েছে এবং উক্ত তারিখে কার্যকর হয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘স্পিকার তার পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট সেটা গ্রহণ করেছেন। এখন গ্রহণ করা ওই পদত্যাগপত্র পাঠানো হবে আইন মন্ত্রনালয়ে।
পরে বিধি অনুযায়ি আইন মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী পদত্যাগ করায় স্পিকার পদে শূন্যতা তৈরি হলো কি না, সে প্রশ্ন উঠেছে। সেই সঙ্গে আগামী জাতীয় নির্বাচনের পর নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ পাঠ কে করাবেন, তা নিয়েও প্রশ্ন এসেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সংবিধান বিশেষজ্ঞ বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে অতীতে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
তাই সবমিলিয়ে কি হচ্ছে বা হবে তা বলা মুশকিল। কারণ আমাদের সামনে এ পরিস্থিতির কোনো উদাহরণ নেই। বাংলাদেশের সংবিধান বলছে, পদত্যাগ করলেও নতুন স্পিকার দায়িত্ব নেয়ার আগ পর্যন্ত শিরীন শারমিন চৌধুরীই পদে থাকছেন বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ ত্রয়োদশ সংসদের নির্বাচিত স্পিকার দায়িত্ব না নেয়া পর্যন্ত শিরীন শারমিনই স্পিকার হিসেবে গণ্য হবেন। তিনিই নতুন সংসদের সদস্যদের শপথ পড়াবেন।
সংবিধানের ৭৪ অনুচ্ছেদে স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকারের পদ কীভাবে শূন্য হবে, সে বিধান বলা আছে। সেখানে সংসদ সদস্য পদ না থাকা, পদত্যাগ করাসহ ৫টি কারণে স্পিকারের পদ শূন্য হবে বলে বলা আছে। তবে একই অনুচ্ছেদে বলা আছে, এসব বিধান সত্ত্বেও ক্ষেত্রমতে স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকার তার উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্বীয় পদে বহাল রয়েছেন বলে গণ্য হবে। বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্রের তৃতীয় সর্বোচ্চ পদ জাতীয় সংসদের স্পিকার।
সংবিধানে বলা আছে, রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে ক্ষেত্রমতো রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত কিংবা রাষ্ট্রপতি পুনরায় স্বীয় কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্পিকার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন। অন্যদিকে সংবিধানের ৫০ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘স্পিকারের উদ্দেশ্যে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে রাষ্ট্রপতি স্বীয় পদ ত্যাগ করিতে পারিবেন’।
সংবিধানের ৭৪ অনুচ্ছেদে সংসদে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচনের বিষয়ে বলা আছে। সংবিধান বলছে, কোনো সাধারণ নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম বৈঠকে সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে সংসদ একজন স্পিকার ও একজন ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন করবে। স্পিকারের পদ শূন্য হবে, যদি তিনি সংসদ সদস্য পদে না থাকেন, মন্ত্রী হন, অপসারণের প্রস্তাব সংসদে গৃহীত হয়, পদত্যাগ করেন অথবা কোনো সাধারণ নির্বাচনের পর অন্য কোনো সদস্য তার কার্যভার গ্রহণ করেন।
বিগত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট গণ আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়লে আওয়ামী লীগের টানা ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। পরদিন সংসদ ভেঙে দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী সংসদ ভেঙে দেয়া হলেও স্পিকারের পদ তাৎক্ষণিভাবে শূন্য হয় না। পরবর্তী স্পিকারের শপথ পর্যন্ত তিনি দায়িত্বে থেকে যান। তবে সেই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা না করে পদত্যাগ করছেন শিরীন শারমিন চৌধুরী।
২০০৯ সালে সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য হিসেবে জাতীয় সংসদে আসেন শিরীন শারমিন। তাকে দেয়া হয় মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। নবম সংসদের শেষ দিকে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর সেই জায়গায় আসেন তখনকার স্পিকার আবদুল হামিদ। এরপর ২০১৩ সালে ৩০ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রথম নারী স্পিকার নির্বাচিত হন শিরীন শারমিন। তারপর থেকে তিন মেয়াদে তিনিই টানা স্পিকারের চেয়ারে ছিলেন।