রংপুর প্রতিনিধি :
নেই কোন শিক্ষাগত যোগ্যতা কিংবা নূন্যতম অভিজ্ঞতা। লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে কোনদিনই বিদ্যালয়ের বারান্দায় পা দেননি। বিয়ের পর স্বামী ও ছেলেমেয়েদের নিকট থেকে অ.আ.ক.খ এবং কোন রকমে নাম দস্তগত করার মতো বিদ্যে আয়ত্ব করেছেন। আর এ টুকু দিয়েই পতিত সরকারের সুবিধাভোগী লীগতন্ত্রের সক্রিয় কর্মী জনৈক দালালকে ম্যানেজ করে রংপুর সদরের একটি বালিকা বিদ্যালয় থেকে টাকার বিনিময়ে ৮ম শ্রেণি পাশ সনদপত্র গ্রহণ করতঃ মোটা অঙ্কের উৎকোচ প্রদানের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ দাই নার্সের একটি চাকরি। ঘটনাটি ঘটেছে রংপুর পরিবার পরিল্পনা বিভাগে। অথচ,আমাদের এ দেশে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিদ্যা এবং অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও অসংখ্য যুবক/যুবতী বেকার জীবন যাপন করছেন,ঘুরছেন চাকরি নামের ‘সোনার হরিণের’ পিছনে।
এ ভাগ্যবতি মহিলার নাম মোসা.স্বপ্না বেগম। তিনি জেলার মিঠাপুকুর উপজেলাধীন মাদারপুর,রাণীপুকুর গ্রামের মৃত নজরুল ইসলামের কন্যা। বিগত প্রায় ২৭ বছর পূর্বে রংপুর মহানগরীর শালবন মিস্ত্রীপাড়ার জনৈক মরহুম ওমর আলীর পুত্র মো.আবুল কাশেমের ( অফিস সহায়ক,সোনালী ব্যাংক পিএলসি) সাথে পারিবারিক ভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের কিছুদিনের মধ্যে পর পর দু’টি সন্তানের জন্ম দেন তিনি। সংসারে অভাব-অভিযোগের কথা চিন্তা করে এবং সন্তানদের উন্নত ভবিষ্যতের কথা ভেবে স্বামী-স্ত্রী উভয়েই আয় বাড়ানোর চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে বিগত ২০১২ ইং সালের প্রথম দিকে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর থেকে রংপুরে দাই নার্স নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলে স্বপ্না বেগম বাংলাদেশ আওয়ামীলিগের স্থানীয় জনৈক নেতার পরামর্শে বিগত ০৪/০৩/২০১৩ ইং তারিখে সদর উপজেলার মমিনপুর নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় থেকে ৮ম শ্রেণির পাঠ সমাপ্তির একটি সনদ গ্রহণ করেন। যে সনদে ৩১/১২/১৯৯৮ ইং তারিখ পর্যন্ত তিনি অত্র বিদ্যালয়ে অধ্যয়ণরত ছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। স্বপ্না বেগম সনদপত্রটি বিদ্যালয় পরিত্যাগের প্রায় এক যুগ পরে গ্রহণ করেছেন। তার বয়সের জায়গায় কাটাছেড়া থাকলেও সেখানে কোন অনুস্বাক্ষর পরিলক্ষিত হয়নি। অপর দিকে নিয়োগ কর্তৃপক্ষ সেটাকে কোন ত্রুটি মনে করেননি বলেই অনুমিত হয়েছে।
এ বিদ্যালয়ে ভর্তির পূর্বে তিনি কোথায় এবং কোন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতেন এবং সেখানকার সনদ আছে কিনা জানতে চাইলে স্বপ্না বেগম সেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম বলতে পারেননি। বরং ঐদ্ধত্যের সাথে বলেছেন “আপনিই খুঁজে বের করুন-আমি কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫মশ্রেণি পাশ করেছি।” তার পৈত্রিক বাড়ি রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পল্লীতে হলেও তিনি ৮ম শ্রেণি পাস সনদে রংপুর সিটির শালবন মিন্ত্রিপাড়া মহল্লায় দেখিয়েছেন, যা তার স্বামীর ঠিকানা। কিন্তু সনদে স্বামীর নাম উল্লেখ না করে শুধুমাত্র পিতা ও মাতার নাম দেখিয়েছেন। যে তারিখে তিনি সনদ গ্রহণ করেছেন (০৪/০৩/২০১৩ইং) ্ওই সময় তিনি একজন পূর্ণ গৃহিনী এবং দু’টি সন্তানের জননী ছিলেন। যারা বর্তমানে কলেজ পর্যায়ে অধ্যয়ণ করছেন।
সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের ভর্তি রেজিষ্ট্রারে স্বপ্না বেগমকে বিগত ২০/০১/১৯৯৮ ইং খ্রি. তারিখে ৮ম শ্রেণিতে ভর্তি দেখানো হয়েছে। তিনি ৬ষ্ঠ বা ৭ম শ্রেণিতে এ বিদ্যালয়ে অধ্যয়ণ করেননি। তা হলে নিশ্চয়ই তিনি অন্য কোন মাধ্যমিক বা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির পাঠ চুকিয়ে তবেই তো এ মমিনপুর নিন্ম মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার কথা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সাদেকুল ইসলাম প্রামাণিক এ প্রতিবেদককে জানান, “ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৯৭ খ্র্স্টিাব্দে। আর স্বপ্না বেগম ৮ম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছেন ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দের ২০ জানুয়ারি তারিখে। ওই সময়টিতে ৬ষ্ঠ, ৭ম কিংবা ৮ম শ্রেণিতে ভর্তি করতে অন্য কোন বিদ্যালয়ের ছাড়পত্রের প্রয়োজন হতো না। সে কারণে কোন কাগজ পত্র যাচাই না করেই স্বপ্না বেগমকে ৮ম শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়।” পাঠ সমাপ্তির প্রায় ১২/১৩ বছর পর কেন বিদ্যালয় পরিবর্তন সনদের প্রয়োজন হলো জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন “ সেটা স্বপ্নার ব্যাপার।” অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়েছে স্বপ্না বেগম সম্পূর্ণ টাকার বিনিময়ে ৪ মার্চ,২০১৩ খ্রিস্টাব্দে কারসজির মাধ্যমে ২০ জানুয়ারি,১৯৯৮ খ্রি. লিপিবদ্ধ করে আলোচ্য সনদটি গ্রহণ করেছেন এবং অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে প্রভাব খাটিয়ে তিনি তার স্বার্থ হাসিল করেছেন। ভর্তি রেজিষ্ট্রারে তার নাম অন্তর্ভৃক্ত করলেও ক্লাশের হাজিরা খাতায় কোনদিনই তাকে উপস্থিত পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ তিনি কোন
দিনই ক্লাশ করেননি। সূত্র মতে বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ দাখিল করার পরও কর্তৃপক্ষ তা আমলে নেননি। প্রকৃতপক্ষে সনদে উল্লেখিত স্বপ্না বেগমের ০৪/০৩/১৯৮৫ খ্রি. জন্ম তারিখটিও সঠিক নয় । কারণ,তার বিয়ের তারিখ ১৬ জুলাই,১৯৯৯খ্রি.। ওই সময় তার বয়স ২০ বছর ছিল বলে তার স্বামী কাশেম মিয়া এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
এদিকে, কেঁচো খুড়তে সাপ বেড়িয়ে আসে। স্বপ্না বেগম এখন আর তার স্বামীর সাথে বসবাস করেন না। চাকরিতে যোগদানের অল্প কিছুদিনের মধ্যেই জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘন্টা গ্রামের মো.আব্দুল জব্বারের পুত্র মো. সাদিকুল ইসলাম নামের জনৈক কলা ব্যবসায়ীর সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। তারও স্ত্রী এবং দুটি সন্তান রয়েছে। এই সাদিকুলের সাথে কাশেম দম্পতির পূর্ব থেকেই জানাশোনা ছিল। আর সে সুবাদেই সাদিকুল ইসলাম বিভিন্ন সময় আবুল কাশেমের নিকট থেকে টাকা-পয়সা ধার-দেনা করতেন,যার শেষ স্থিতি ছিল ১৩ তেল ) লক্ষ টাকা । অপর দিকে ওই সাদিকুল ও স্নপ্নার পরকীয়া এক সময় এমন রূপ নেয় যে,এক রাতের আঁধারে (১৭ জুলাই,২০২৩ খ্রি. ) স্বপ্না বেগম তার দু-দুটি ছেলেমেয়েকে রেখে স্বামীর চাকরি থেকে অবসর প্রাপ্তির গ্রাচ্যুয়িটি ও অন্যান্য পাওনাদির প্রায় ১৭/১৮ লক্ষ টাকা এবং কিছু স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে গিয়ে সাদিকের সঙ্গে বসবাস শুরু করেন । বেচারা আবুল কাশেম বলেন “ আমি স্বপ্নাকে তালাক দেইনি। সে সম্পূর্ণ ইসলামী শরীয়াহ বহির্ভূত ভাবে তার পরকীয়ার সাথে বসবাস করছে।” তিনি আরও বলেন, “ আমি স্বপ্নার কুমানসিকতা বুঝতে পারিনি। তাই তার কথায় রাজি হয়ে আমার সর্বস্ব শেষ করে মোটা অংকের টাকা স্থানীয় আওয়ামীলিগ নেতা এবং অফিসারকে ঘুষ দিয়ে এই চাকরিটি নিয়ে দেই। আর সে আমার বুকে চাকু মেরে অন্যের সাথে চলে গেলো ! ”
এ ঘটনার পর আবুল কাশেম তার স্ত্রীকে টাকাসহ ফিরে পাবার ব্যর্থ আশায় এবং সাদিকের কাছে প্রদেয় অর্থ ফেরত পাবার জন্য একাধিকবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের স্মরনাপন্ন হন। কিন্তু স্ত্রীকে ফেরৎ আনতে ব্যর্থ হলেও স্ত্রী তার স্বামীর অলক্ষ্যে ১৫ (পনের লক্ষ) টাকা নিয়েছেন এবং সাদিকুল দেনা হিসেবে ১৩ ( তের লক্ষ) টাকা গ্রহণ করার করা স্বীকার করেন এবং তা ফেরৎ দিবার অঙ্গীকার করে দু’জনে তাদের স্ব স্ব নামীয় দুটি ব্যাংক চেকে স্বাক্ষর করে দেন। যার স্বপ্না বেগম স্বাক্ষরিত চেক নং- ৮৭৫৭৫৭৬, হিসাব নং -৩৩০৩১০১০২৬৮০৬, তারিখ-০৮/০৯/২০২৫, টাকা=১৫ (পনের ) লক্ষ, পূবালী ব্যাংক লি..স্টেশন রোড শাখা,রংপুর এবং সাদিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চেক নং-৪১৭৬৬৬২, হিসাব নং-৭০১৭৩১৫৫২৯৫৭৩, তারিখ -১০/১১/২০২৪,টাকা =১৩ (তের ) লক্ষ, ডাচ বাংলা ব্যাংক লিঃ। কিন্তু আবুল কাশেম যতোবারই টাকা উত্তোলনের জন্য চেক দুটি ব্যাংকে জমা দিয়েছেন ততোবার পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা না থাকায় তা ফেরত এসেছে । ফলে বেচারা কাশেম মিয়া হতাশায় একেবারে ভেঙ্গে পড়েছেন। ছুটছেন মধ্যস্থতাকারিসহ আইনজীবীদের দ্বারে দ্বারে। তাদের পরামর্শে নিয়েছেন আদালতে আশ্রয়। টাকা আদায়ের বিষয়ে আদালতের আশ্রয় নিলেও স্ত্রীকে উদ্ধারের জন্য কোন মামলা-মোকদ্দমা করেননি কাশেম মিয়া। সারা জীবনের অর্জন পেনশনের টাকা এবং অর্দ্ধ বয়স্কা স্ত্রীকে হারিয়ে পাগলপ্রায় কাশেম মিয়া একদম চুপচাপ হয়ে গেছেন। সচেতন মহলের প্রশ্ন “ কাশেম মিয়া কি তার জীবদ্দশায় ওই চেকের টাকা আদায় করতে পারবেন?” এখন শুধুই অপেক্ষা বিজ্ঞ আদালতের রায়ের জন্য।
এ ঘটনায় কাশেম মিয়ার পাশাপাশি সাদিকুলের ফেলে আসা দুটি সন্তান এবং স্ত্রী আয়শা বেগম একেবারে পথে বসেছে। অন্যের বাসাবাড়িতে কাজ করে কোন রকমে অর্দ্ধাহারে অনাহারে জীবন যাপন করছেন। সাদিকুল ইসলাম তাদের ভরণপোষণের জন্য এক পয়সাও দেন না এমনকি কোন প্রকার খোঁজ খবরও নেন না বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী আয়েশা বেগম।
উভয়ের ( কাশেম ও স্বপ্না) সাথে কথা বলে জানা গেছে, কাশেম মিয়া অতিশয় একজন সাদাসিদে মানুষ। স্ত্রীর কথায় ওঠাবসা করতেন। অপরদিকে স্বপ্না বেগম অত্যন্ত চালাক ও ধুরন্ধর ব্যক্তি। তার বর্তমান কর্মস্থলের কর্মরত অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, স্বপ্নার প্রধান কাজ হলো অবৈধ গর্ভপাত ঘটানো। কেউ অবৈধভাবে গর্ভবতী হলে তারা ছুটে আসেন স্বপ্না আপার কাছে । অবৈধভাবে গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে জনৈকা এক নারীর মৃত্য ঘটেছে বলেও সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে।
















