নেত্রকোণা থেকে জাহিদ হাসান :
নেত্রকোণার কলমাকান্দায় রাতে বালু জব্দ করার পর তা রাতেই এক ব্যক্তির কাছে নিলামে বিক্রি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। আর নিলামে প্রায় ২১ হাজার ঘনফুট বালু ক্রয় করা ওই ব্যক্তি স্থানীয় প্রশাসনের নিলামের নাম ভাঙ্গিয়ে শত ব্যবসায়ীর আরো প্রায় পৌনে দুই লাখ ঘনফুট বালু লুটে নেয়ার চেষ্টা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেছেন, তারা শুধু জব্দের বালুই নিলামে বিক্রি করেছেন।
এ নিয়ে গতকাল রোববার (১ সেপ্টেম্বর) বালু ব্যবসায়ীদের পক্ষে নূরে আলম, মানিক মিয়া, আব্দুল হেলিম,আশিকুর রহমান ও স্বপন মিয়া নামের ৫ জন ব্যবসায়ী জেলা প্রশাসক ও নেত্রকোণা অস্থায়ী সেনা ক্যাম্পের অধিনায়কের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
শত ব্যবসায়ীর বালু লুটে নেয়ার চেষ্টা চালানোর অভিযুক্ত ব্যক্তি হচ্ছেন, উপজেলা সদরের রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম মামুন ।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, উপজেলার বাসাউড়া, মনতলাসহ বিভিন্ন গ্রামের প্রায় একশত বালু ব্যবসায়ী দীর্ঘদিন ধরে উব্ধাখালি নদী দিয়ে পরিবহনের মাধ্যমে বালু কেনা-বেঁচা করে আসছেন । তারা উপজেলা সদরের বাসষ্ট্যান্ড এলাকার বাসাউড়া মৌজার পূর্বপাশ থেকে মনতলা গ্রামের কলমাকান্দা ব্রীজ নাগাদ উব্ধাখালি নদীর দক্ষিণ পাড় অংশে বালু রেখে এই ব্যবসা পরিচালনা করছেন। এ অবস্থায় গত ২৯ অগাষ্ট বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে স্থানীয় প্রশাসন অভিযান চালিয়ে প্রায় ২১ হাজার ঘনফুট বালু জব্দ করে। পরে রাতেই বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় জব্দের ২১ হাজার ঘনফুট বালু পৃথক দিইটি নিলামের মাধ্যমে ১২ লাখ ৪২ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। জহিরুল ইসলাম মামুন ওই নিলামে বালু কেনার পরদিন ওই এলাকায় ব্যবসায়ীদের থাকা বালু লুট করে নেয়ার চেষ্টা চালায়। অভিযোগ,বালু লুটের উদ্দেশ্যে নিলামে কেনা বালুর সাথে সেখানে থাকা ব্যসায়ীদের আরো প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার ঘনফুট বালু একসাথে মিশিয়ে ফেলেন। এ নিয়ে ব্যবসায়ীরা মামুনকে প্রশ্ন করলে মামুন তার লোকজন নিয়ে ব্যবসায়ীদের প্রান নাশের হুমকি-ধামকি দেন।
অভিযোগকারী চান্দাইল গ্রামের বালু ব্যবসায়ী মো: নূরে আলম বলেন, রাতের আঁধারে প্রশাসনের কাছ থেকে মামুন ২১ হাজার ঘনফুট বালু কিনে আমাদের ব্যাবসায়ীদের প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকার ১ লাখ ৭০ হাজার ঘনফুট বালু লুট করার চেষ্টা চালাচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বাড়তি তিন লাখ টাকা দিয়ে ব্যবসায়ীদের সব বালু কিনে নেয়ার কথা বলে মামুন আমাদেরকে বালুর কাছে না যাওয়ার জন্যে নানান হুমকি দিচ্ছে।এ অবস্থায় আমরা প্রানভয়ে বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আমরা আমাদের বালু রক্ষা করাসহ জীবনের নিরাপত্তা চাই।এর সুবিচার চাই।
কলমাকান্দা সদর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান, মো: সেলিম তালুকদার বলেন, ২৯ অগাস্ট বিকালে আর্মি অফিসার এসে ব্যবসায়ীদের বলেন, এক সপ্তাহ বালু কেনা-বেচা বন্ধ রাখতে। একথা শোনার পর ব্যবসায়ীরা বালু কেনা-বেচা বন্ধ রেখে বাড়িতে চলে যান । পরদিন সকালে ব্যবসায়ীরা গিয়ে দেখেন সব বালু একসাথে মিশিয়ে একাকার করে ফেলেছে। তখন তারা জানায় নিলামে বালু কেনা মামুন তার ২১ হাজার ঘনফুট বালুর সাথে সব বালু মিশিয়ে ফেলেছে। মামুন বলতেছে সব বালুর মালিক সে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সব বালু তাকে দিয়ে গেছেন।
তিনি বলেন, বিষয়টা পুরো মিথ্যা। মামুন প্রভাবশালী হওয়ায় বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটের সুযোগ নিয়ে জোর করে বালু ব্যবসায়ীদের পৌনে দুই কোটি টাকার বালু নিয়ে যাচ্ছে। এখানে যারা বালু বেচা-কেনার সাথে জড়িত তারা সুনামগঞ্জ থেকে নদী পথে আসা বৈধ বালু কেনা-বেচা করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। এদের মধ্যে অনেকেই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। এখানের আয় দিয়েই তারা পরিবার পরিজন নিয়ে চলেন। মামুনের এরকম জোরজুলুম বন্ধ করতে প্রশাসনের এগিয়ে আসা দরকার।
জহিরুল ইসলাম মামুন বলেন, গত ২৯ অগাষ্ট দুইটি পৃথক নিলামে আমি অংশ নিয়ে ১২ লাখ ৪২ হাজার টাকায় দুইটি নিলামই আমি পাই। কতটুকু বালু নিলামে কিনেছেন প্রশ্নের জবাবে নিজেকে ডেইলি অবজারভার পত্রিকার সাংবাদিক দাবি করা মামুন বলেন, এইখানে আসলে একটা আনুমানিক তারাতো আর স্ট্রাকচারালভাবে ফিতা দিয়ে একেবারে মেপে মেপে দেন নাই। তবে এটা একটা উপস্থিত জনতার সাথে স্ট্যাটমেন্ট নিয়ে প্রত্যেকের সাথে কথা বলে তারা ২১ হাজার কত যেন ঘনফুট বালু এই মূহূর্তে মনে নাই। নিলামে দুই একজন অংশ নেবে এমন না। আসলে শত শত মানুষ উপস্থিত ছিলেন। বাড়তি ১ লাখ ৭০ হাজার ফুট বালু লুটের চেষ্টার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,রাত সাড়ে ৯টা প্লাস সময়ে প্রথম ডাক আর পরের ডাকটা ঘন্টা দেড়েক পরে হয়েছে। নিলামের বৈধ –অবৈধ বিষয়টি কর্তৃপক্ষ বলবেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, ২৯ অগাষ্ট রাত সাড়ে ৯টার দিকে আনুমানিক ২১ হাজার ঘনফুট বালু জব্দ করা হয়েছে। তখন বাসস্টৗ্যান্ড এলাকায় পৃথক দুইটি নিলামের মাধ্যমে ভ্যাট,আইটিসহ ১২ লাখ ৪২ হাজার ৫০০ টাকায় বালু নিলাম করা হয়। উন্মুক্ত নিলাম প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই এটা সম্পন্ন করা হয়েছে। নিলামের বালু মামুনকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে এবং আগামী ৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বালু নিয়ে যাওয়ার সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। সেখানে অনেকেই সিলেট,সুনামগঞ্জ থেকে আসা বালুর ব্যবসা করছেন। তাদের বালু বৈধ। তারা ব্যবসা করছেন । তাদের বালু যদি মামুন নেয়ার চেষ্টা করে ব্যবসায়ীরা এ নিয়ে অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অভিযোগের বিষয় ও রাতে বালু জব্দের পরপর রাতেই নিলাম করা নিয়মমাফিক হয়েছে কি না জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা বলব।
,