চট্টগ্রাম প্রতিনিধি :
চট্টগ্রাম মহানগরীতে পারিশ্রমিকের টাকা চাওয়ায় রেবেকা সুলতানা মনি নামে এক নারীকে শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনায় এক ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড এবং আরেকজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। এর মধ্যে আসামি নেজাম উদ্দিনকে মৃত্যুদণ্ড, ২০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ছয় মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ সিরাজাম মুনীরা এ রায় ঘোষণা করেন। আসামিদের মধ্যে নেজাম উদ্দিন রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি আবদুল হালিম পলাতক। তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড, ২০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ছয় মাসের সাজা দিয়েছে আদালত। অপর আসামি আবু সিদ্দিক রুবেলকে খালাস দেয়া হয়েছে।
দণ্ডিত নেজাম উদ্দিন (৩০) চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের হালিমপুর গ্রামের মৃত জালাল আহাম্মদের ছেলে। নেজাম নগরীর ডবলমুরিং থানার উত্তর আগ্রাবাদের মুহুরি পাড়ার বাসিন্দা। যাবজ্জীন সাজাপ্রাপ্ত আসামি আবদুল হালিম (৪৫) ভোলার চরফ্যাশনের দক্ষিণ চর আইচার মো ইউনুছের ছেলে। খালাস পাওয়া আবু সিদ্দিক রুবেল (২৯) নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার মির্দ্দাপাড়ার মো. আলী আকবরের ছেলে।
অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের পেশকার ওমর ফুয়াদ বলেন, আসামি নেজাম উদ্দিন ও আবদুল হালিমের বিরুদ্ধে ৩০২ ধারায় হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় নেজাম উদ্দিনকে মৃত্যুদণ্ড এবং আবদুল হালিমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দিয়েছে আদালত। আসামিদের মধ্যে নেজাম উদ্দিন আদালতের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন বলেও জানান ওমর ফুয়াদ।
আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে বায়েজিদ বোস্তামি থানার মুরাদনগর মির্দ্দাপাড়া এলাকায় জামালের মালিকানাধীন ভবনের চতুর্থ তলায় ৩০ বছর বয়সী রেবেকা সুলতানা মনি খুন হন। ওই বছরের ১৩ মে রাতে পুলিশের একটি দল ওই বাসা থেকে দুর্গন্ধ বের হওয়ার খবর পেয়ে সেখানে যায়। স্থানীয়দের উপস্থিতিতে ওই কক্ষের মেঝেতে পড়ে থাকা মনির মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মৃতদেহের শরীরে পচন ধরেছিল। ঘটনার পাঁচ মাস আগে অন্য এক নারীকে ছোট বোন এবং ছোট বোনের স্বামী পরিচয়ে আবদুল মজিদ (আবদুল হালিম বাসা ভাড়া নেয়ার সময় তার নাম আবদুল মজিদ বলে জানিয়েছিল) নামের একজনসহ বাসাটিতে ভাড়াটিয়া হিসেবে উঠেছিল মনি। লাশ উদ্ধারের পর বায়েজিদ বোস্তামি থানার এসআই মো. রেজাউল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করে।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, আবদুল হালিম বাসা ভাড়া নিয়ে কয়েকজন নারীকে সেখানে রেখে তাদের দিয়ে অর্থের বিনিময়ে পতিতাবৃত্তির কাজ করাত। আবদুল হালিমের সঙ্গে পূর্ব পরিচয়ের সূত্রে মির্দ্দাপাড়ার ওই বাসায় নিয়মিত যেত ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী নেজাম উদ্দিন। মির্দ্দাপাড়ার ওই বাসায় শুরুতে তিনজন নারী থাকলেও তাদের পারিশ্রমিকের টাকা রেখে দিত আবদুল হালিম। একারণে পরে দুই নারী চলে যায়। পরে কেবল মনি সেখানে থাকত। মনি বোনের বিয়েতে দেয়ার জন্য আবদুল হালিমের কাছে থাকা তার প্রায় দেড় লাখ টাকা চাওয়ায় হালিম ক্ষুব্ধ হয়ে মনিকে খুনের সিদ্ধান্ত নেয়। এ জন্য নেজামের সহায়তা চান তিনি।
নেজাম তার জবানবন্দিতে বলেছিলেন, ২০১৯ সালের ১১ মে সকালে মির্দ্দাপাড়ার ওই বাসায় যান তিনি। এ সময় বাসায় মনি একা ছিল। মনিকে চড় দিয়ে মাটিতে ফেলে গলা টিপে শ্বাসরোধের চেষ্টা করে নেজাম। এক পর্যায়ে মনির মুখ থেকে রক্ত বের হলে তাকে ছেড়ে দেয় নেজাম। এরপর মনি চিৎকার করার চেষ্টা করলে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে তাকে খুন করে ওই বাসা থেকে চলে যায় নেজাম। যাবার সময় মনির মোবাইল ফোনটি নিয়ে যান। ওই ফোনের সূত্র ধরে লাশ উদ্ধারের এক সপ্তাহ পর নেজামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জানতে পারে।
২০২০ সালে চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শরীফুল আলম ভূঁঞার আদালতে তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এতে বলা হয়, আসামি আবদুল হালিমের নির্দেশে আসামি নেজাম উদ্দিন শ্বাসরোধ করে রেবেকা সুলতানাকে হত্যা করে। আর ঘটনার বিষয়ে জেনেও আবু সিদ্দিক রুবেল কাউকে কিছু না বলায় তার বিরুদ্ধেও অভিযোগ গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। এই মামলায় ১১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বৃহস্পতিবার আদালত এই রায় দেয়।