বুধবার , ২২ জানুয়ারি ২০২৫ | ৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অপরাধ
  2. অপরাধচিত্র বিশেষ
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. খুলনা
  6. খেলাধুলা
  7. চট্রগ্রাম
  8. জাতীয়
  9. জেলার খবর
  10. ঢাকা
  11. তথ্য-প্রযুক্তি
  12. প্রবাসের কথা
  13. বরিশাল
  14. বিনোদন
  15. ব্যাবসা-বাণিজ্য

হোটেলে কাজ করে মেডিকেলে চান্স পেলেন বাউফলের আল আমিন

প্রতিবেদক
Newsdesk
জানুয়ারি ২২, ২০২৫ ১:৪২ অপরাহ্ণ

পটুয়াখালী প্রতিনিধি :

পটুয়াখালীর বাউফলে ভাতের হোটেলে কাজ করে মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছে আল আমিন নামের এক শিক্ষার্থী। ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় ২০০ নম্বরের মধ্যে ১৮৬ দশমিক ২৫ নম্বর পেয়ে বরিশাল বিভাগে তিনি প্রথম হয়েছেন এবং সারা দেশের মধ্যে মেধাতালিকায় তার ক্রমিক নম্বর ১১৭। আল আমিন পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের মাধবপুর গ্রামের নিজাম উদ্দিন হাওলাদারের ছেলে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আল আমিনের বাবা নিজাম উদ্দিন হাওলাদারের বসতভিটা ছাড়া আর কিছুই নেই। বাড়ির কাছে ছোট একটি ভাড়া ঘরে খাবার হোটেলের ব্যবসা করেন। পাশাপাশি অন্যের জমি বর্গা রেখে কৃষি কাজও করেন। মা নাজমা বেগম একজন গৃহিনী। তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে আল আমিন দ্বিতীয়। মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় আল আমিন উত্তীর্ণ হওয়ার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর এলাকাবাসীর মধ্যে চমক সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষক, স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীদের অনেকেই তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।

আল আমিন বলেন, পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া অবস্থায় সহপাঠীদের সঙ্গে খেলাধুলা না করে পড়াশোনায় মনোযোগ ছিল আমার। পড়াশোনার পাশাপাশি তখন থেকেই বাবাকে তার ভাতের হোটেল ব্যবসায় সহযোগিতা করতাম, হোটেলে বাবার সঙ্গে কাজ করতাম। পরিবারের অভাবের কারণে নিজ গ্রামের মাধবপুর নিশিকান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হই। এসএসসি পাশের পর বিজ্ঞান বিভাগে বরিশাল সরকারি কলেজে ভর্তি হই। ভর্তি হওয়ার পর অর্থের অভাবে কোনো মেসে উঠতে পারিনি। শহরে থাকার ব্যবস্থা করতে না পারায় কলেজে ক্লাস করতে পারিনি। কিন্তু পড়াশোনা থেকে এক মুহুর্তের জন্য সরে যাইনি। সব সময় মাথায় চিন্তা ছিল বড় কিছু অর্জন করতে হবে। বাবা ও মায়ের মুখ উজ্জল করতে হবে। এ কারণে বাড়িতে বসে প্রায় এক বছর বাবার সঙ্গে নিয়মিত হোটেলে কাজ করেছি আর মুঠোফোনের মাধ্যমে অনলাইনে ক্লাশ করেছি।

আল আমিন মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য বাবা-মা, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

তিনি আরও বলেন, নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে অধ্যবসায় করলে অসম্ভবকে সম্ভব করা কোনো ব্যাপারই না।

আল আমিনের বাবা নিজাম উদ্দিন হাওলাদার বলেন, ‘ছোট টিনের ঘর ও ভিটা ছাড়া কিছুই নাই তার। অভাবের সংসার। জীবনে কোনোদিন কোনো কিছুর জন্য বায়না করেনি আল আমিন। ছোট বেলা থেকেই আমার ছেলেটা খুবই ভালো ছিল। ওকে পড়তে বলা লাগেনি। আমার সঙ্গে হোটেলে থালা বাসন ধোয়ার কাজ করেছে। আবার পড়াশোনাও করেছে। দোকানে বসে পুড়ি, সিঙ্গারা ও ছামুচা বানিয়েছে, ভাত বিক্রি করেছে। আল আমিন ডাক্তারিতে চান্স পাওয়ায় তিনি ও তার পরিবারের সবাই গর্বিত। তিনি ছেলের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। ডাক্তার হয়ে যেন আল আমিন নিজেকে মানব সেবায় নিয়োজিত করতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, ছেলেকে মানুষ করার জন্য খাবার হোটেলের ব্যবসা করেছি ও রিকশা চালিয়েছি। রাতের বেলাও শ্রমিকের কাজ করেছি। আজ আর সেসব কষ্টের কথা মনে নেই। কারণ আমার ছেলে ডাক্তার হবে।

আল আমিনের মা নাজমা বেগম বলেন, ‘বাবায় আমার বড় ডাক্তার হবে, আমি আজ খুবই খুশি।

মাধবপুর বাজারের ব্যবসায়ী মো. নিজাম উল্লাহ বলেন, ‘এরকম ভদ্র ও বিনয়ী স্বভাবের ভালো ছেলে বর্তমানে পাওয়া মুশকিল। তার মধ্যে হিংসা ও অহংকারের লেসমাত্র নাই। তার এমন ভালো ফলাফলে শুধু তার বাবা ও মা নয়, গোটা এলাকার মানুষ আনন্দিত ও গর্বিত।’

মাধবপুর নিশিকান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়দেব চন্দ্র শিকারী সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষকদের কাছ থেকে কিছু নেওয়ার জন্য ব্যাকুল থাকতো আল আমিন। আমার বিশ্বাস আল আমিন অনেক বড় মাপের চিকিৎসক হবেন এবং চিকিৎসাশাস্ত্রে অনেক বড় অবদান রাখবে।

 

সর্বশেষ - জেলার খবর