নিজস্ব প্রতিবেদক :
তথ্যপ্রযুক্তি পরিসেবা, সফটওয়্যার এবং যন্ত্রপাতিসহ তথ্যপ্রযুক্তির বৈশ্বিক বাজার প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে বিশ্বের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বৃহত্তম জনগোষ্ঠী থাকা সত্তেও, আমাদের আয় ২.৫ বিলিয়ন ডলার। যা তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে সমন্বিত পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন জরুরি।
শনিবার (৯ নভেম্বর) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার’ শীর্ষক সেমিনারে ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ এসব কথা বলেন।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষর (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।
সেমিনারে ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, এ খাতে আমাদের কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি উচ্চতর মূল্য সংযোজন পরিসেবা প্রদানের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে এবং সেমিকন্ডাক্টর ভ্যালুচেইনে উৎপাদন ক্ষমতা সম্প্রসারিত করতে হবে। এ ছাড়াও পণ্যের ডিজাইন, অ্যাসেম্বলি প্যাকেজিং এবং টেস্টিং (এপিটি) প্রভৃতি খাতে আমাদের দক্ষতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উদীয়মান আইওটি বাজারের জন্য ইন্টিগ্রেটেড ডিভাইস ম্যানুফ্যাকচারিং (আইডিএম)-এর সুযোগগুলো অনুসরণ করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ন, যথাযথ বাস্তবায়ন, কৌশলগত বিনিয়োগ, সরকারি ও বেসরকারিখাতসহ সকল অংশীদারদের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলা জরুরি।
তিনি আরও বলেন, সফটওয়্যার ও পরিসেবা রপ্তানি ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি হয়েছে এবং ২০২৪ অর্থবছরে রপ্তানি আয় প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, একটি পরিবর্তিত পরিস্থিতে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে, যা সকলের বিবেচনা করা প্রয়োজন। তিনি বিদ্যমান নীতিমালা সমূহের যথাযথ বাস্তবায়ন করা গেলে নাগরিক সেবার পাশাপাশি ব্যবসায়িক কার্যক্রম আরো সহজতর হবে এবং বর্তমান সরকার এ বিষয়টিকে অধিক হারে প্রাধান্য দিচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ, রপ্তানি পরিসংখ্যানসহ অন্যান্য তথ্যে অসঙ্গতি ছিল, যা নিরসনে বর্তমান সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কারণ সঠিক পরিসংখ্যান ছাড়া কখনই যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়ন করা সম্ভব নয়।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকার ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে, যার কার্যক্রম অব্যাহত আছে, যেখানে দেশের সকল স্তরের নাগরিকদের পাশাপাশি বিশেষ করে বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের নিজেদের প্রত্যাশার প্রস্তাব পেশ করতে পারে, যার ভিত্তিতে সংস্কার কার্যক্রম আরো জোরালো হবে।
বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, আমাদের তৈরি পোষাক শিল্পের পর তথ্যপ্রযুক্তি খাত অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। যেখানে বিশেষ করে তরুণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের পাশপাশি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ সম্প্রসারণ সম্ভব।
দেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের অনুমতি প্রদান প্রক্রিয়া সহজীকরণের লক্ষ্যে বিডার পক্ষ হতে কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলেও তিনি জানান।
বন্ডস্টেইন টেকনোলোজিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর শাহরুখ ইসলাম সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ২ হাজার ৬০০টিরও বেশি আইটি কোম্পানি কাজ করছে। এ খাতের বাজারের আকার ২.৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এবং বর্তমানে ৪৫০টি বাংলাদেশি কোম্পানি তাদের উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করছে।
তিনি আরো বলেন, সফটওয়্যার পরিসেবার সীমিত সুযোগের সঙ্গে বাংলাদেশের ডিভাইস উৎপাদন ক্ষমতা নেই। তিনি জানান, বাংলাদেশ থেকে আইটি পণ্যের সবচেয়ে বড় রপ্তানি গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। রপ্তানি বাড়াতে তিনি স্থানীয় আইসিটি কোম্পানিগুলোকে বিদেশে অফিস স্থাপনের অনুমতি দেওয়া এবং আইসিটি পণ্য রপ্তানিতে প্রণোদনা পুনঃস্থাপনের সুপারিশ করেন।
আইসিটি উদ্যোক্তারা সহায়ক নীতির অভাব এবং ঋণ প্রাপ্তিতে কঠোর জামানত প্রক্রিয়া মুখোমুখি হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ খাতের বিকাশে পণ্যের মেধাস্বত্ব অধিকারের সুরক্ষা অতীব জরুরি।
সেমিনারের নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (আইসিটি) মোহাম্মদ জাকির হাসান, বেসিস-এর প্রাক্তন সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর, বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশন্স লিমিটেডের চীফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান এবং ওয়ালটন ডিজি টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. লিয়াকত আলী অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (আইসিটি) মোহাম্মদ জাকির হাসান বলেন, দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে সমন্বিত পরিকল্পনার কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, এ খাতের অবকাঠামো উন্নয়ন এখনও আশানুরূপ নয়, যেখানে বেসরকারিখাতের বিনিয়োগে এগিয়ে আসার প্রচুর সুযোগ রয়েছে।
বেসিসের সাবেক সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল খাতের উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে প্রণোদনা দেওয়া যেতে পারে।
ওয়ালটন ডিজি টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. লিয়াকত আলী বলেন, প্রতিযোগিতামূলক নীতির অভাবে আমরা দেশে এফডিআই আকৃষ্ট করতে পারছি না। তিনি আইটি ও সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের জন্য শুল্ক ও কর কাঠামো সংস্কারের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, সেমিকন্ডাক্টর সেক্টরে বাংলাদেশের ভালো ডিজাইনের হাউস রয়েছে, তাই সরকারি ও বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগে বাংলাদেশে হার্ডওয়্যার উৎপাদনের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারে।
বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশন্স লিমিটেডের চীফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে সংশ্লিষ্ট নীতিমালার সংস্কার অপরিহার্য। বিশেষ করে তিনি টেলিকম এ্যাক্ট সংস্কারের প্রস্তাব করেন।