চট্টগ্রাম প্রতিনিধি :
মুক্তিযুদ্ধে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বিলির ‘সাইক্লোস্টাইল’ মেশিনটি চট্টগ্রামে সংরক্ষিত আছে। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আখতারুজ্জান চৌধুরী বাবুর বাসা থেকে মেশিনটি স্থান পায় আনোয়ারা সরকারি কলেজে। বিভিন্ন সময়ে মেশিনটি দেখতে যায় নতুন প্রজন্ম ও সাধারণ মানুষ। আর নিজেদের কলেজে ঐতিহাসিক ‘সাইক্লোস্টাইল’ মেশিন সংরক্ষিত থাকায় গর্বিত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি শাসকদের হাতে আটকের আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি সীতাকুণ্ডের সলিমপুরের ভিএইচএফ ওয়ারলেস সেন্টারে পাঠানো হয়।
মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক নাসিরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘সীতাকুণ্ডের সলিমপুরে ভেরী হাই ফ্রিকোয়েন্সির ওয়ারলেস সেন্টার ছিল। সেখানে পাঠানো হয় ঘোষণাপত্রটি। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর বাসার পাশে ছিল সাবেক মন্ত্রী মোশাররফ হোসনের বাসা। ওই বাসা থেকে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা জহুর আহমেদ চৌধুরীর বাসায় টেলিফোনে পাঠানো হয় ঘোষণাটি।’
মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘সলিমপুরে বার্তাটি গ্রহণ করেন ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল কাদের। তিনি জহুর আহমদের চৌধুরীর বাসায় পাঠান বার্তাটি। ঘোষণাপত্রটি হাজার হাজার কপি করে বিলির সিদ্ধান্ত নেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। সেই সুবাদে আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর নগরীর জুপিটার হাউসের বাসায় সাইক্লোস্টাইল মেশিন নিয়ে সারা রাত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের অসংখ্য কপি করা হয়। ২৬ মার্চ চট্টগ্রামজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাপত্র। মাইকেও প্রচার করা হয় ঘোষণাটি। বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয় ঘোষণাপত্রটি।’
স্বাধীনতার স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক সেই সাইক্লোস্টাইল মেশিনটি সংরক্ষিত রয়েছে চট্টগ্রামের আনোয়ারা সরকারি কলেজের বঙ্গবন্ধু কর্নারে। ১৯৭২ সালের পরে অনোয়ারা কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ মো. হোসেন খানের উদ্যোগে আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান বাবুর বাসা থেকে কলেজে নিয়ে যাওয়া হয় সাইক্লোস্টাইল মেশিনটি। কিছুদিন কলেজের প্রশ্নপত্র তৈরির কাজও করা হয় মেশিনটি দিয়ে। পরে মেশিনটি লাইব্রেরিতে সংরক্ষণ করা হয়।
২০১১ সালে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সাইক্লোস্টাইল মেশিনটি নিয়ে যেতে চিঠি দেয় কলেজ কর্তৃপক্ষকে। সে সময় প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরীর হস্তক্ষেপে সেটা রক্ষা হয়। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানান, মেশিনটি তারা মর্যাদার সঙ্গে সংরক্ষণ করছেন। এখন বঙ্গবন্ধু কর্নারে কাচ ঘেরা করে রেখেছেন। কোনো আয়োজনে প্রদর্শনের ব্যবস্থাও করেন।
আনোয়ারা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, তিনি কলেজে যোগদান করেছেন কয়েকবছর আগে। তিনি অত্যন্ত খুশি যে, স্বাধীনতার এমন দলিল আনোয়ারা কলেজে আছে। নানা জাতীয় দিবসে এটা প্রদর্শন করা হয়।
নিজেদের বিদ্যাপীঠে মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক নিদর্শন থাকায় আনন্দিত শিক্ষার্থীরা। শারমিন নামের কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার জানান, এই মেশিনটা দেখে এবং ইতিহাস শুনে তারা অনুপ্রাণিত হন। গর্ব করেন যে মেশিনটা তাদের কলেজে।
গবেষক ও সাংবাদিক মুহাম্মদ শামসুল হক বলেন, ‘সাইক্লোস্টাইল এর মত মুক্তিযুদ্ধের নিদর্শন সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা জরুরি। কারণ এসব জাতীয় সম্পদ। প্রজন্ম এসব দেখে ইতিহাস জানবে।’