আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যায় ব্যবহার হওয়া অস্ত্র দেহ উদ্ধার অন্যতম সন্দেহভাজন সিয়াম হোসেনকে ১৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বারাসাতের জেলা ও দায়রা জজ আদালত।
শনিবার বিচারক সঙ্গীতা লেটের আদালতে কলকাতা পুলিশের সিআইডি ১৪ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।
সরকারি আইনজীবী মন্দাক্রান্তা মুখোপাধ্যায় এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, দেহাংশ কোথায় ফেলা হয়েছে, কী অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে সেগুলো উদ্ধারের জন্য রিমান্ড চাওয়া হয়।
শুক্রবার বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁ এলাকা থেকে সিয়ামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শনিবার দুপুরের বারাসাত জেলা ও দায়রা আদালতে নিয়ে আসা হয়। দুপুর দুইটার দিকে তাকে এজলাসে তোলা হয়।
সিয়ামকে নিয়ে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডে এনিয়ে দুইজনকে গ্রেপ্তার করলো পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি।
এর আগে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে জিহাদ হাওলাদার নামে সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারর করে সিআইডি। গত ২৩ মে এই জিহাদকে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁ থেকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই এই সিয়ামের জড়িত থাকার বিষয়টি জানতে পারে তদন্তকারী কর্মকর্তারা।
গত ১৩ মে সঞ্জীবা গার্ডেনে এমপি আনারকে খুন করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। মনে করা হচ্ছে সাংসদ খুন ও লাশ লোপাটের কাজে যুক্ত ছিল এই সিয়াম। নিউটাউনের অভিজাত ওই সঞ্জীভা গার্ডেনের যে সিসিটিভি ফুটেজ সামনে আসে তাতেও সিয়ামকে দেখা যায়।
এদিকে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, সিয়াম এখন কলকাতা সিআইডির হেফাজতে রয়েছে। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের বিচার বাংলাদেশ না ভারত কোন দেশে হবে তা তদন্তের এক পর্যায়েই ঠিক হবে বলে জানান তিনি।
আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে, খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের খুঁজতে নেপালেও পাড়ি দিয়েছিল সিআইডির দল। সেখানকার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে তারা।
সিআইডি সূত্রের বরাতে পত্রিকাটি লিখেছে, এই খুনের মামলার মূল অভিযুক্ত আখতারুজ্জামান ওরফে শাহিনের খোঁজ চলছে। অনুমান, শাহিন কলকাতা থেকে নেপাল হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে গিয়েছেন। দেশটির বাসিন্দা তিনি। তাই তাকে হেফাজতে নেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আমেরিকার প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগও শুরু করা হয়েছে।
গত ১২ মে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে কলকাতায় যাওয়ার পরেরদিন রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যান তিনবারের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার।
এরপর ২২ মে সকালের দিকে তার খুনের খবর প্রকাশ্যে আসে। পুলিশ বলছে, কলকাতার উপকণ্ঠে নিউটাউনের অভিজাত আবাসন সঞ্জীভা গার্ডেনসের একটি ফ্ল্যাটে আনারকে খুন করা হয়।
খুনের আলামত মুছে ফেলতে দেহ কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়। এরপর সুটকেস ও পলিথিনে ভরে ফেলে দেওয়া হয় বিভিন্ন জায়গায়।
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্যকে হত্যার পর মরদেহ ফেলার কাজে অংশ নেয়া মুম্বাই থেকে ভাড়া করে আনা কসাই জিহাদকে গ্রেপ্তার করেছে কলকাতা পুলিশ। জিহাদ কলকাতা পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন।
আর ঢাকায় ডিবির হাতে গ্রেপ্তার হন হত্যাকাণ্ডের মূল সংঘটক চরমপন্থি নেতা আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, শিলাস্তি রহমান ও ফয়সাল আলী ওরফে সাজি ওরফে তানভীর ভূঁইয়া। এই তিনজনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
এদিকে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার ঘটনায় ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতাকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
আটক হওয়া কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবু জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক। তিনি আনার হত্যার মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহিন এবং হত্যাকাণ্ডের মূল সংঘটক চরমপন্থি নেতা শিমুল ভুঁইয়ার আত্মীয়।