নিজস্ব প্রতিবেদক :
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং চলমান সংকটের শান্তিপূর্ণ ও সংবিধানসম্মত সমাধান নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে টিআইবি।
বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে চলা সারাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছিল। শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশ এবং সভা-সমাবেশ করার সাংবিধানিক অধিকার পালনের এ আন্দোলনে প্রাথমিকভাবে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহিষ্ণু আচরণ আমাদের মনে আশার সঞ্চার করেছিল।
তিনি বলেন, অথচ সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ন্যক্কারজনক সহিংস হামলা করা হলো। গণমাধ্যমসহ অন্যান্য নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া সংবাদে দেখা গেল, হামলায় প্রকাশ্যে নারী শিক্ষার্থীদেরও কাপুরুষোচিতভাবে নির্বিচারে, বিপজ্জনকভাবে আঘাত করা হলো, অসম্মান করা হলো। গণমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, মঙ্গলবার রংপুরে আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যুও হয়েছে। আমরা এ হামলা ও মৃত্যুর ঘটনায় আতঙ্কিত, ক্ষুব্ধ, হতাশ। হামলাকারী সন্ত্রাসীদের দল-মত নির্বিশেষে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।
যে দেশের গৌরবময় ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা অর্জনসহ সব অধিকারভিত্তিক ইতিবাচক অর্জনে শিক্ষার্থীদের স্বর্ণোজ্জ্বল ভূমিকা, সেই বাংলাদেশের ঐতিহ্য বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারবে- এ প্রত্যাশা করে ইফতেখারুজ্জামান আরো বলেন, সরকারের উচিত হবে, আদালতের কাঁধে বন্দুক রেখে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিকে অস্বীকার না করা; বরং কোটা সংস্কার আন্দোলনের যৌক্তিক, যুগোপযোগী, শান্তিপূর্ণ ও সাংবিধানসম্মত ইতিবাচক সমাধানের উদ্যোগ নেয়া। টিআইবি প্রত্যাশা করে, সরকার কোনো অবস্থাতেই সংঘাত উসকে দিয়ে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলন দমনের পথে হাঁটবে না, বরং শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত করার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করবে।
টিআইবি মনে করে, ক্ষমতাসীন দলের নেতৃবৃন্দসহ রাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায় থেকে আন্দোলনকারীদের বিষয়ে নেতিবাচক ধারণা যেমন পরিহার করতে হবে, তেমনি আন্দোলনকারীদেরও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও দেশাত্মবোধ নিয়ে যৌক্তিক দাবি আদায়ের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। কোনোভাবেই মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যেনো অবমাননা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, সোমবার দিনভর এবং গভীর রাতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত সন্ত্রাসীরা যেভাবে পাক হানাদার বাহিনীর মতো হামলা করেছে তা কাপুরুষতা এবং তা প্রতিরোধ করতে না পারা সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক ব্যর্থতা।
তিনি বলেন, ঢাকা, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, খুলনা, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকারসমর্থিত ছাত্র সংগঠন ও বহিরাগত সন্ত্রাসীর হামলা ঠেকানোর দায় সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও এড়াতে পারে না। আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করলাম, সন্ত্রাসীরা প্রথম হামলাকারী হলেও সংঘাতের দায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর চাপানোর অশুভ প্রচেষ্টা যেমন চলছে, তেমনি হামলা ঠেকাতে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বিশেষ করে, সরকারের একাধিক মন্ত্রী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহিংসতা উসকে দেয়ার ঘটনায় লিপ্ত হয়েছেন, যার নিন্দার পর্যাপ্ত ভাষা নেই। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর রাতের আঁধারে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের হামলায় আমরা স্তম্ভিত, হতবাক। আমরা এমন সন্ত্রাসের পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না। অনতিবিলম্বে তা বন্ধ করতে হবে এবং সহিংসতায় জড়িত সবাইকে নির্মোহ ও স্বার্থের দ্বন্দ্বমুক্তভাবে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের যৌক্তিক, শান্তিপূর্ণ ও সংবিধানসম্মত দ্রুততম সমাধানের লক্ষ্যে সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সব পক্ষকেই সংযত ও যৌক্তিক আচরণ করার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি অবিলম্বে হামলার ঘটনায় আহতদের সুচিকিৎসা এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাসহ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পরিবেশ যেকোনো উপায়ে নিশ্চিত করতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।