নিজস্ব প্রতিবেদক :
হজ্জ এজেন্সীস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) ‘র বর্তমান কমিটি বিলুপ্তি এবং আগামী বছর হজ্জ পালনে হাজিদের খরচ ৫ লাখে নামিয়ে আনার দাবিতে এক সংবাদ সম্মেলনে করে হজ্জ বৈষম্যবিরোধী হজ্জ এজেন্সীর মালিকবৃন্দ।
বুধবার ১১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে হাবের সাবেক নেতা ও মক্কা গ্রুপ অব কোম্পানিজের চেয়ারম্যান এম এ রশিদ শাহ সম্রাট বলেন, ‘সরকারের পতনের পর হাবের সভাপতি যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পলাতক রয়েছেন। বর্তমান কমিটির কোনো কার্যকারিতা নেই। হজের খরচ বাড়িয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়াসহ নানা অনিয়ম করেছেন তারা। তাই অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে তাদের পদত্যাগ ও বর্তমান কমিটির বিলুপ্তি চাই।
তিনি বলেন, ‘হজকে জটিল করে ফেলা হয়েছে। আমাদের ১ লাখ ২৭ হাজার কোটা রয়েছে হজে। এরই মধ্যে আগামী হজের জন্য ৩ লাখ টাকা করে নেওয়া শুরু হয়েছে। একটা হরিলুটের মতো চলছে। এখন পর্যন্ত হজ্জ প্যাকেজের জন্য মাত্র ২৫ হাজার আবেদন করেছে। হাবের সভাপতি তসলিম নানা কৌশলে এত খরচ বাড়িয়েছেন। আমাদের দেশ থেকে হজের যে কোটা রয়েছে গত দুই বছরে সেটাও পূরণ হয়নি। তাই বিমানের ভাড়াসহ হজের খরচ এবার সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকার বেশি প্যাকেজ যেন না হয়।’ এবার প্রতি এজেন্সির জন্য হজযাত্রী সর্বনিম্ন ৫০ জন এবং সর্বোচ্চ ১০০ জন করে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
এর আগে লিখিত বক্তব্যে বৈষম্যবিরোধী হজ্জ এজেন্সির মালিকবৃন্দের আহ্বায়ক মো. আখতার উজ্জামান বলেন, ‘একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমানের সারা জীবনের লালিত স্বপ্ন জীবনে একবারের জন্য হলেও আল্লাহর ঘরের মেহমান হয়ে পবিত্র কাবার জিয়ারত ও সোনার মদিনায় হাজির হওয়া। এ মহান কাজটি সুন্দর ও সুচারুরূপে সম্পাদন করতে এজেন্সীর মালিকগণ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও দপ্তরের আন্তরিক সহযোগিতা একান্ত জরুরি।’
মো. আখতার বলেন, ‘এজেন্সির মালিক ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে মূল সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করে থাকে হজ এজেন্সীস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)। সুদীর্ঘ আট বছর এই সংগঠনের কার্যকরী কমিটির স্বৈরতান্ত্রিক সভাপতি এম. শাহাদাত হোসেন তসলিম, যিনি বর্তমান যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং পলাতক। তার প্রধান মদতদাতা ও ব্যবসায়িক অংশীদার সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালের ক্ষমতাকে পুঁজি করে হাবকে ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘তসলিম নিয়মবহির্ভূতভাবে আওয়ামী সন্ত্রাস, প্রশাসন ও দুর্নীতির মাধ্যমে তার পেটোয়া বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে দেশের অর্থ-সম্পদ লুণ্ঠন করে বিদেশে বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচার করেছেন।’
বর্তমান কমিটির অনিয়মের কথা তুলে ধরে আখতার উজ্জামান বলেন, ‘হাবের বর্তমান বিতর্কিত সভাপতি ও তার দোসররা বিগত চার বছর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) না করে আমাদের সংঘ স্মারক ও বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা লঙ্ঘন করেছেন। চার বছর এজিএম করতে ব্যর্থ হওয়ায় কোনো বাজেট পাস না করেই অননুমোদিতভাবে হাবের অর্থ ব্যয় করেই চলেছেন। এতে এই কার্যনির্বাহী কমিটি বৈধতা হারিয়েছে। তসলিম হাব থেকে ২০১৭ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত হজের জন্য ১ শতাংশ বাড়িভাড়া, হজ ব্যবস্থাপনা, আপৎকালীন ফান্ড, প্রশিক্ষণ, বারকোড ভিসা ও বিমান টিকিট সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে প্রভাব খাঁটিয়ে সন্ত্রাসী বাহিনী ব্যবহার করে কৌশলে শত শত ভোটারকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করে জাল ভোট ও পাতানো প্রহসনের নির্বাচন করে অবৈধভাবে (২০১৭-২০২৫) পরপর চার বারে আট বছরের জন্য হাবের সভাপতি হিসেবে নিজেকে টিকিয়ে রেখেছেন। তিনি সিন্ডিকেট করে মাত্র ৫৬টি লাইসেন্সের মাধ্যমে হজ পরিচালনার চক্রান্তের মূল হোতা ও ২ হাজার হাজি কোটার প্রবর্তক এবং ২০২৪ সালে ২৫০ জন হাজি প্রতি লাইসেন্সে বাধ্যতামূলক পাঠানোর মাস্টারমাইন্ড এবং লিড এজেন্সির প্রবক্তা। প্রতি লাইসেন্সে ন্যূনতম ১০০ জন হাজি পাঠানোর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে হজ লাইসেন্সধারীদের ২৫০ জনের কোটা চাপিয়ে দিয়ে পথে বসিয়েছে বলেও দাবি করেন আখতার।’ বর্তমান কমিটি বিলুপ্তির জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি ।