নিজস্ব প্রতিবেদক :
অর্থ আত্মসাৎ, অর্থপাচার ও দুর্নীতিসহ বিরোধী মত দমনে সাবেক মন্ত্রী কামরুল ইসলাম আগ্রাসী ভূমিকায় ছিলেন বলে জানিয়েছে ডিবি পুলিশ। শুধু তা-ই নয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা কামরুল ইসলাম করেননি।
মঙ্গলবার সকালে ডিবি পুলিশের রমনা জোনাল টিমের পুলিশ পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আরিপ কামরুল ইসলামকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। রিমান্ড আবেদনে এ কথা বলেন তদন্ত কর্মকর্তা।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়, কামরুলের ভয়ে তার সংসদীয় এলাকাসহ বিভিন্ন মানুষ স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারতেন না। তিনি আইন প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বহু নিরপরাধ মানুষকে জেল-জুলুমের মাধ্যমে নির্যাতন করেছেন। তিনি ফ্যাসিস্ট সরকারের অন্যতম কলংকিত চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের বহু অপকর্মের ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে তাকে নিয়ে দেশ ও বিদেশে জনশ্রুতি আছে।
তার গ্রেপ্তারে এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে শান্তি ফিরে এসেছে। আসামি কামরুলসহ অন্য আসামিদের নির্দেশে মাহফুজুর রহমান, নাসির উদ্দিন, শামীম উসমান, মো. আবু মুসা, মাঈনুদ্দিন, শাহাদাত হোসেন ও আবির হোসেনসহ অনেক নিরস্ত্র ছাত্র-জনতা ও সাধারণ পথচারী আহত এবং চিরতরে পঙ্গু হয়। তাদের মধ্যে আব্দুল ওয়াদুদ আসামিদের ছোড়া এলোপাতাড়ি গুলিতে মাথার পেছনে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যান।
আবেদনে আরো বলা হয়েছে, মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত আছে মর্মে স্বীকার করেছেন তিনি।
প্রাথমিক তদন্তে এই আসামি মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। তার দেশ ছেড়ে বিদেশে পলায়নের বিভিন্ন চেষ্টা অব্যাহত ছিল। তার বিরুদ্ধে তদন্তকার্য অব্যাহত আছে। তিনি অতিগুরুত্বপূর্ণ একজন দলীয় পলিসি/ডিসিশন মেকার ছিলেন। তাকে পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অতিগুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদঘাটিত হবে।
এদিন সকাল ৯টার দিকে গ্রেপ্তার কামরুলকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়। এরপর পুলিশের চাওয়া ১০ দিনের রিমান্ড শুনানি শুরু হয়। এ সময় আসামিপক্ষে তার আইনজীবী রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তার আট দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ১৯ জুলাই বিকেল ৫টায় নিউমার্কেটের ১ নম্বর গেটের সামনে গুলিতে নিহত হন ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদ। এ ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ১৩০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়। নিহত ব্যবসায়ীর শ্যালক আব্দুর রহমান বাদী হয়ে গত ২১ আগস্ট নিউমার্কেট থানায় এ মামলা করেন।
তিনি ২০০৮ সাধারণ নির্বাচনে ঢাকা-২ আসনের জন্য আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন এবং নির্বাচনে জয়ী হয়ে হন। ২০১৪ সালে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুনরায় সংসদ সদস্য হন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ২০০৮ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ থেকে তিনি খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বর্তমানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য।