জাফর আলম,কক্সবাজার থেকে :
কক্সবাজারের রামু উপজেলার মেরিন ড্রাইভের হিমছড়ি ঝর্নার আশপাশের জায়গা নিয়ে উপজেলা প্রশাসন ও বন বিভাগের মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে। বিরোধের জেরে বৃহস্পতিবার পক্ষে বিপক্ষে স্থাপনা উচ্ছেদ বা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে রামু উপজেলার সহকারী কমিশনার ভূমির সঙ্গে প্রকাশ্যে তর্ক হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর বিরোধ নিরসন করার কথা জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন।কক্সবাজার টেকনাফ মেরিন ড্রাইভে হিমছড়ি ঝর্নাকে কেন্দ্র করে বন বিভাগের অধীনে হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান, বন বিভাগের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নিসর্গ এবং রামু প্রশাসনের অধীনে হিমছড়ি বাজার, পার্কিং, পাবলিক টয়লেট ঘিরে আশপাশের জায়গা নিয়ে এমন বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, হিমছড়ি ঝর্নাটি বন বিভাগের পক্ষে ইজারা দেওয়া হয়। আর এই ঝর্নার সামনের বাজার, পার্কিং ইজারা দেয় রামু প্রশাসন। হিমছড়ি বাজারের পূর্বে ৪ বছর আগে এনজিওর অর্থায়নে একটি পাবলিক টয়লেট রয়েছে, যা প্রতিবছর ইজারা দেয় উপজেলা প্রশাসন। সম্প্রতি পর্যটন স্পট ঝর্নার কিছু সংস্কার কাজ শুরু করে বনবিভাগ। এ সংস্কারের অংশ হিসেবে নতুন গেট নির্মাণের জন্য পাবলিক টয়লেটের কিছু অংশ বৃহস্পতিবার সকালে ভেঙে দেয় বনবিভাগ।
বিষয়টি জানার পর রামুর সহকারী কমিশনার ভূমি ঘটনাস্থলে এসে টয়লেট ভেঙে দেওয়ার কারণ জানতে চায় বন বিভাগের কর্মকর্তার কাছে। বন বিভাগ গেট নির্মাণের প্রয়োজনীয় এবং টয়লেটটি বন বিভাগের জমিতে রয়েছে বলে দাবি করেন। এরপর সহকারী কমিশনার ভূমি হিমছড়ি ঝর্নার উত্তর পাশে বন বিভাগের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নিসর্গরের পাশে অবস্থিত কিছু স্থাপনা ১ নম্বর খাস খতিয়ানের দাবি করে যেগুলো ভাঙচুর করা হয়। বিষয়টি জানাজানির পর বন বিভাগীয় কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে গেলে বাগ্বিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। সামাজিক মাধ্যমে পাওয়া ভিডিওটি সহকারী কমিশনার ভূমি প্রকাশ্যে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের প্রকাশ্যে হুমকি স্বরে কথা বলতে দেখা গেছে।
বন বিভাগের হিমছড়ির রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুল হক বলেন, নিসর্গ পুরোটাই বন বিভাগের ২ নম্বর খতিয়ানের অধীনে। যেখানে থাকা বন পাহারার গোল ঘর, ঘেরা-বেড়া, হিমছড়ি জাতীয় উদ্যানের সাইনবোর্ডটি ভেঙে দিয়েছেন সহকারী কমিশনার ভূমি। অথচ দীর্ঘদিন ধরে বন বিভাগের জমিতে পাবলিক টয়লেটটি পরিচালিত হলেও কোনো হস্তক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ঝর্নার প্রবেশ গেট নির্মাণের কারণে তার কিছু অংশ ভাঙতে হয়েছে। কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগীয় কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম বলেন, শতভাগ বন বিভাগের জমিতে সহকারী কমিশনার ভূমি ভাঙচুর করেছে। এতে বন বিভাগের ক্ষতি হয়েছে। ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর প্রকাশ্যে অপদস্থ করা হয়েছে। বিষয়টি ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক উদ্যোগ নিয়েছেন। আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন মহল নির্দেশ দিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে রামু উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাজ্জাদ জাহিদ রাতুল বলেন, আমাদের কাছে তথ্য ছিলো খাস খতিয়ানের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারি বনবিভাগ সেটি নির্মাণের অনুমতি দেয়। যেখানে রেস্টুরেন্ট তৈরি করা হচ্ছে। পরে বনবিভাগের অফিসে গিয়ে কাউকে না পেয়ে ঠিকাদারকে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু নির্দেশ উপেক্ষা করে বনবিভাগের কর্মকর্তারা কাজ করতে বলে।তিনি আরো বলেন, খবর পেয়ে আবারও সেখানে গিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে উচ্ছেদ অভিযানে গেলে তারা বাঁধা দেওয়ায় তর্ক হয়।
এ ঘটনায় তারা ইউএনও মহোদয়ের সঙ্গে আলাপ করেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়।রামু উপজেলা ইউএনও রাশেদুল ইসলাম বলেন, এখানে বন বিভাগ এবং প্রশাসন দুপক্ষের জায়গা আছে। আমরা দুপক্ষে সরকারের স্বার্থে কাজ করছি। বিষয়টি নিয়ে সহকারী কমিশনার ভূমির সঙ্গে বন বিভাগের ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছিল। আমি জানার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে এর নিরসন করেছি। তিনি আরও বলেন, এখানে বিরোধের কিছু নেই। দুপক্ষ তো সরকারের জন্য কাজ করছে। সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও আসা একটু বিব্রতকর।