আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
চলতি বছর হজে গিয়ে ১৩০১ জন হজযাত্রী মারা গেছেন। সৌদি আরব বলছে, মারা যাওয়া এসব মানুষের বেশিরভাগই ছিলেন অননুমোদিত হজযাত্রী। যারা তীব্র গরমে দীর্ঘ দূরত্ব পায়ে হেঁটেছিলেন। এই বছরের হজের সময়টায় ছিলো তীব্র তাপপ্রবাহ। সেখানে তাপমাত্রা কখনও কখনও ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
আজ সোমবার (২৪ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সরকারি সৌদি বার্তা সংস্থা এসপিএ জানিয়েছে, যারা মারা গেছেন তাদের তিন-চতুর্থাংশেরও সেখানে থাকার আনুষ্ঠানিক অনুমতি নেই এবং তারা পর্যাপ্ত আশ্রয় ছাড়াই সরাসরি সূর্যের আলোর নিচে হেঁটেছেন। যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে কয়েকজন বয়স্ক বা দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থ ছিলেন।
সৌদির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফাহদ আল-জালাজেল বলেছেন, তাপ ও চাপের বিপদ কীভাবে হজযাত্রীরা এটি প্রশমিত করতে পারে সে সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর প্রচেষ্টা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য সুবিধাগুলো প্রায় ৫ লাখ হজযাত্রীকে চিকিৎসা করেছে, যার মধ্যে ১ লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি যাদের কাছে হজ করার পারমিট ছিল না। কেউ কেউ এখনও তাপ ক্লান্তির জন্য হাসপাতালে রয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আল্লাহ ক্ষমা করুন এবং মৃতদের প্রতি রহম করুন। তাদের পরিবারের প্রতি আমরা আন্তরিক সমবেদনা জানাই।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, সৌদি আরব হজকে নিরাপদ করতে আরও পদক্ষেপ না নেয়ার জন্য সমালোচিত হয়েছে, বিশেষ করে অনিবন্ধিত হজযাত্রীদের জন্য যাদের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তাঁবু এবং অফিসিয়াল হজ পরিবহনের মতো সুবিধা ব্যবহারের সুযোগ নেই।
সৌদি আরবের জাতীয় আবহাওয়া কেন্দ্রের তথ্য অনুসারে, মক্কায় তাপমাত্রা ৫১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়েছে। বিশ্বজুড়ে দেশগুলো তাদের নাগরিকদের মৃতের সংখ্যা সম্পর্কে আপডেট দিচ্ছে, তবে সৌদি আরব রোববার পর্যন্ত মৃত্যুর বিষয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করেনি বা সরকারি ভাবে সংখ্যা প্রদান করেনি।
বার্তা সংস্থা এএফপি একজন আরব কূটনীতিকের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ৬৫৮ মিশরীয় মারা গেছেন। ইন্দোনেশিয়া বলেছে যে, তার ২০০ জনেরও বেশি নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন, এবং ভারত ৯৮ জনের মৃত্যুর সংখ্যা দিয়েছে। পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, জর্ডান, ইরান, সেনেগাল, সুদান এবং ইরাকের স্বায়ত্তশাসিত কুর্দিস্তান অঞ্চলও মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
হজ হলো পবিত্র নগরী মক্কায় মুসলমানদের ধর্মের পাঁচটি মৌলিক ভিত্তির একটি। আর্থিক ও শারীরিকভাবে সক্ষম সকল মুসলমানকে তাদের জীবনে অন্তত একবার হজ সম্পন্ন করতে হবে।
মূলত শারীরিক ও আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান প্রতিটি মুসলমানের জন্য হজ পালন করা ফরজ বা অবশ্য পালনীয় একটি কর্তব্য। আর সেই কারণেই মুসলিম বিশ্বের লাখ লাখ নারী-পুরুষ প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট সময়ে হজ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে সমবেত হন।
আরবি বছরের সর্বশেষ মাস জিলহজকে বলা হয় হজের মাস। কারণ ওই মাসের আট থেকে বারো তারিখ পর্যন্ত হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হয়ে থাকে। সৌদি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই বছর প্রায় ১৮ লাখ ৩০ হাজারের মতো হাজি এই হজযাত্রায় অংশগ্রহণ করেছেন, যার মধ্যে ১৬ লাখই এসেছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে।
সৌদি আরব জানিয়েছে, এ বছর হজে প্রায় ১৮ লাখের বেশি মানুষ অংশ নিয়েছে।
বিশেষ করে অননুমোদিত হজ যাত্রীদের কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। এই কারণে শনিবার (২২ জুন) মিশরীয় প্রধানমন্ত্রী মোস্তফা মাদবৌলি ১৬টি পর্যটন কোম্পানির লাইসেন্স কেড়ে নিয়েছেন।
শুক্রবার (২১ জুন) জর্ডান বলেছে যে তারা বেশ কয়েকজন ট্রাভেল এজেন্টকে আটক করেছে যারা মক্কায় মুসলিম হজ যাত্রীদের অনানুষ্ঠানিক ভ্রমণে সহায়তা করেছিল।
এদিকে তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট কাইস সাইদ ধর্মমন্ত্রীকে বরখাস্ত করেছেন।
হজের আগে সৌদি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা মক্কা থেকে কয়েক হাজার অননুমোদিত হজযাত্রীকে সরিয়ে দিয়েছে।