নিজস্ব প্রতিবেদক :
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে সুবিধাবাদীরা ঢুকে গেছে, এই সরকার নিয়ে খুব বেশি দূর এগোনো সম্ভব না।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী রাষ্ট্র সংস্কারে পেশাজীবীদের ভাবনা শীর্ষক আলোচনা সভা এ কথা বলেন তিনি। বাংলাদেশ পেশাজীবী অধিকার পরিষদের তৃতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়।
নুরুল হক নুর বলেন, বাংলাদেশ পেশাজীবী অধিকার পরিষদ এক বছর আগে ড. ইউনূসকে নিয়ে প্রোগ্রাম করেছিল। শিরোনাম ছিল, ‘বিচারিক হয়রানি ও ড. ইউনূস।’ তখন অনেক ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও আমরা এই কাজটি করেছি। আমাকে ১৯ জুলাই আটক করে কী পরিমাণ নির্যাতন করেছিল, তা আমার সঙ্গে যারা ছিলেন তারা জানেন। আমি আদালতেও বলেছিলাম এই ফ্যাসিবাদ টিকবে না। যার জন্য আমাকে আরও বেশি নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।
তিনি বলেন, এক বছর আগে আমরা বলেছিলাম দুই বছরের জন্য জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। এখন সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
নুর বলেন, আমরা বলছি সরকারকে জাতীয় সরকারের রূপ দিতে, অনেকেই ভাবতে পারেন আমি উপদেষ্টা হওয়ার জন্য বলছি। আমি এখানে ঘোষণা দিচ্ছি আমি এই সরকারের পার্ট (অংশ) হব না। তবে সরকার চাইলে আমরা প্রস্তাব দিতে পারি। এই সরকারে যারা আছে তাদের কয়জন এই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজপথে সরব ছিল? অথচ যারা রাজপথে ছিল তাদেরকে মূল্যায়ন করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, এই সরকার পতনে আন্দোলন একদিনে হয়নি, গত কয়েক বছর ধরে এর পটভূমি রচিত হয়েছে। ২০১৮ সালের আন্দোলন না হলে ২৪ সালে এই আন্দোলন হতো কি না সন্দেহ। এই আন্দোলনের সামনের সারির অনেকেই আমাদের ছাত্র অধিকার পরিষদের ছিল তাই বলে আমরা তো নিজেদের মাস্টারমাইন্ড দাবি করতে পারি না। এই আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াতের অংশগ্রহণ না থাকলে আন্দোলন সফল হতো না।
নুর বলেন, এখন হুট করেই নির্বাচন দিলে বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না। কারণ, অনেকের অনেক ক্ষুধা রয়েছে। ড. ইউনূস স্যারের আন্তর্জাতিক যে যোগাযোগ রয়েছে, যেভাবে বিশ্ব নেতারা তাকে সম্মান করেন, এটা আমাদের গর্ব। আমার ড. ইউনূসের ওপর আস্থা রয়েছে, কিন্তু আশঙ্কা তার চারপাশের লোকদের নিয়ে।
তিনি বলেন, দেশের সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট ও সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করার জন্য ভারত ষড়যন্ত্র করছে। পাহাড়িদের ভারত উসকানি দিচ্ছে। এসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার জন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। সামনে দুর্গাপূজা আসছে, সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পূজা উদযাপন করতে পারে। আশঙ্কা রয়েছে, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা হামলা করে বিশ্বকে দেখাতে পারে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে।
আলোচনাসভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পেশাজীবী অধিকার পরিষদের সভাপতি ডেন্টিস জাফর মাহমুদ, সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ পেশাজীবী অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খালিদ হাসান।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন— জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লতিফ মাসুম, ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন, গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ, শাকিল উজ্জামান, সহসভাপতি আফজাল হোসেন, বাংলাদেশ পেশাজীবী অধিকার পরিষদের দপ্তর সম্পাদক রেজওয়ান রূপ দীনেশ, গণমাধ্যম ও প্রকাশনা সম্পাদক সাংবাদিক জি এম রোকনুজ্জামান, সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী নাসির, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস এম সুমন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. কাউছার শেখ, সিনিয়র সহসভাপতি জনাব মো. শামসুল আলম, শ্রমিক অধিকার পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান, যুব অধিকার পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক মুনতাজুল ইসলাম প্রমুখ।