আলমগীর হোসেন :
রাজনীতিতে কোন শর্টকার্ট নেই। রাজনীতির পথ কুসুমাস্তির্ণও হয় না। চাড়াই-উৎড়াই, ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যদিয়ে এগিয়ে যেতে হয় রাজনীতির বন্ধুর পথ। এই গন্তব্যের একমাত্র পাথেয় হচ্ছে নীতি-আদর্শ, স্বচ্ছতা আর দায়বদ্ধতা। রাজনীতির মাধ্যমে বদলে দেয়া যায় সমাজ, অর্থনীতি-দেশ। বদলে দেয়ার স্বপ্ন থেকেই রাজনীতি করছেন স্বপ্নবাজ আকন কুদ্দুসুর রহমান। তৃণমূলের রাজনীতি থেকে উঠে আসা আকন কুদ্দুসুর রহমান ছাত্রনেতা থেকে জননেতায় পরিণত হয়েছেন গৌরনদী-আগৈলঝাড়া (বরিশাল-১) আসনে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান দলের ক্রান্তিলগ্নে শত বাধার মুখে থেকেও রাজনীতির মাঠ ছেড়ে সরে যান নি, ছিলেন গণমানুষের পাশে, ছিলেন নির্যাতিত কর্মী-সমর্থকদের পাশে। কর্মী-সমর্থকদের পাশে থাকার জন্য, রাজনীতির মাঠে থাকার জন্য তাকে পোহাতে হয়েছে হামলা-মামলা, নির্যাতন। বিগত দেড় দশক পতিত আওয়ামী লীগের অপশাসনের পুরো সময় স্থানীয় রাজনীতিতে আকন কুদ্দুসুর রহমান মাঠে থেকে কর্মীদের পাশে থেকে আওয়ামী দুঃশাসনের মোকাবেলা করেছেন। দলীয় সিদ্ধান্ত ও প্রোগ্রামে প্রতিবাদী অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁর এই ত্যাগ ও স্বচ্ছ রাজনীতির ফলে গৌরনদী-আগৈলঝাড়ার মানুষ তাকে নিজেদের ‘আকন ভাই’ হিসেবে ঠাঁই দিয়েছেন।
আগামী জাতীয় নির্বাচনে গৌরনদী-আগৈলঝাড়া (বরিশাল-১) আসনের সর্বস্তরের মানুষ এখন একজোট হয়েছে আকন কুদ্দুসুর রহমানের সাথে। নিজ দলের সমর্থন তো রয়েছেই, পাশাপাশি ভিন্নমতের নেতা-সমর্থকরাও তার পাশে এসে জোটবদ্ধ হয়েছে। সম্প্রতি ‘অপরাধচিত্র’ আকন কুদ্দুসুর রহমানের সাথে মুখোমুখি হলে খোলামেলা কথা বলেছেন পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক আলমগীর হোসেন’র সাথে।
অপরাধচিত্র : রাজনীতিতে আপনার পথচলা কিভাবে?
আকন কুদ্দুসুর রহমান : ’৮০-র দশকে ছাত্ররাজনীতির মধ্য দিয়ে আমার রাজনৈতিক জীবন শুরু। মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়া আমার আদর্শ পুরুষ। তার নীতি-আদর্শে উদ্দিপ্ত হয়ে কলেজ জীবনে ছাত্ররাজনীতি শুরু করি। ১৯৮৫ সালে ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলাম। ১৯৮৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার দা সূর্যসেন হল ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হই। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মনোনীত হই। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের পক্ষ থেকে সকল কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করি। ’৯০-এর দুর্বার আন্দোলনে ডাকসুর নেতা খাইরুল কবীর খোকনের সাথে কারাবরণও করি। ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ছাত্র ও যুবলীগ ক্যাডাররা আমাকে অপহরণ করে। সে সময়ের নির্যাতনের কথা মনে হলে আজও গা-শিউরে ওঠে। ১৯৯৪ সালে আমি বরিশাল জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই। এছাড়া গৌরনদী থানা বিএনপি’র সহ-সভাপতি মনোনীত হই। পরবর্তীতে যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির (বুলু-আলাল) সহ-প্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হই। বরিশাল (উত্তর) বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য পদে দায়িত্ব পালন করেছি।
আমি রাজনৈতিকভাবেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি-পরিবারের সদস্য। আমার বড় ভাই সিদ্দিকুর রহমান একটানা ১৫ বছর খানজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি গৌরনদী থানা বিএনপির সহ-সভাপতি ও খানজাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ছিলেন। শুধুমাত্র বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন বলেই আওয়ামী লীগের প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। তাদের দায়ের করা একাধিক মিথ্যা মামলায় কারাবরণ করেছেন। মৃত্যুকালেও তার নামে ৬টি মিথ্যা মামলা ছিল।
আমার মামা মো. আমজউদ্দিন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও গৌরনদী সারকারি কলেজের জিএস ছিলেন।
সক্রিয় রাজনীতির পাশাপাশি আমি ১৯৯৪-’৯৬ সাল পর্যন্ত আগৈলঝাড়া ডিগ্রী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক পদে চাকরি করেছি। ১৯৯৭-’৯৯ সাল পর্যন্ত মোহম্মদপুর কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের প্রভাষক ছিলাম।
অপরাধচিত্র : গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হচ্ছে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গৌরনদী-আগৈলঝাড়া (বরিশাল-১) থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মাঝে আপনিও আছেন। দল থেকে কি বিষয়টা নিশ্চিত করা হয়েছে।
আকন কুদ্দুসুর রহমান : যেহেতু রাজনীতি করছি, রাজনীতিতে আপনার মত ও স্বপ্নের বাস্তবায়ন সম্ভব হয় নির্বাচনে আপনার এলাকার প্রতিনিধিত্ব করার মধ্যদিয়ে। সেহেতু নির্বাচনে অংশগ্রহণের ইচ্ছে এবং প্রস্তুতি তো আছেই। দলের উচ্চপর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এবং দলের প্রয়োজনে এই সিদ্ধান্ত বদলাতেও পারে। এ ক্ষেত্রে আমি বলতে পারি দলের স্বার্থের পরিপন্থী হয় কিংবা দালের ক্ষতি হয় এমন কোন বিষয়ে আমার সম্পৃক্ততা আগেও ছিল না এখনও থাকবে না। দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে যে দিকনির্দেশনা দেয়া হবে তা মেনে নিবÑ এটাই আমার অবস্থান।
অপরাধচিত্র : বর্তমানে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে সামগ্রীক রাজনীতি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
আকন কুদ্দুসুর রহমান : প্রথমেই বলব, রাজনীতি হচ্ছে বহুমত ও পথের সম্মিলন। আর গণতান্ত্রিক ধারায় রাজনীতিতে ভিন্নমতের সাথে সহাবস্থান করেই এগিয়ে যেতে হয়। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে বিগত দেড় দশকে নিজেকে ‘গণতন্ত্রের মানসকন্যা’ দাবী করেই গণতন্ত্রের কবর রচনা করেছেন শেখ হাসিনা। জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে এক নৈরাজ্যকর ও স্বৈরাচারী শাসন কায়েম করেছিল আওয়ামী লীগ। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার কঠোর শাসনামলে বিএনপি তৃণমূল থেকে সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা সন্ত্রাস, হামলা, গ্রেফতার ও মিথ্যা মামলার শিকার হয়েও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে গেছেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সুযোগ্য নেতৃত্ব আর যুগোপযোগী দিকনির্দেশায় স্বৈরাচারীকে হটানোর যে আন্দোলন দেড় দশক থেকে চলছিল তার সমাপ্তি ঘটে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে। তারেক রহমান ‘নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্ট্রা’। তিনি কেবল একজন ব্যক্তি নন, তিনি এক অনুপ্রেরণা, তিনি এক গণজাগরণের নাম। তার নেতৃত্বে মানুষ একটি ন্যায়ের রাষ্ট্র, আইনের শাসন ও প্রকৃত গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে। দেশের আপামর জনসাধারণ তাকে গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করেছে।
আমরা আসন্ন নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। এই নির্বাচন হবে বাংলাদেশের রাজনীতির গতিপথ বদলে দেয়ার নির্বাচন। আমাদের দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি অতিতের মতো যেভাবে জনগণের পাশে ছিল, জনগণ সেভাবে বিএনপিকে সমর্থন দিয়ে আগামীর সরকার পরিচালনার দায়িত্ব দিতে উন্মুখ।
অপরাধচিত্র : নির্বাচন নিয়ে যে সংশয়ের আবহ তৈরি হয়েছে তাতে কি মনে হয় আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নির্বিঘ্ন হবে?
আকন কুদ্দুসুর রহমান : নির্বাচন নির্বিঘ্ন হওয়া ছাড়া ভিন্ন কোন পথ খোলা নেই। নির্বাচন হতেই হবে এবং তা সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ। শুধুমাত্র স্বৈরশাসকের বিদায়ে আমাদের প্রকৃত অর্জন সাধিত হয়নি। দীর্ঘ আন্দোলনের পর যে পরিবেশ তৈরি হয়েছে যেখানে সুষ্ঠু নির্বাচন ছাড়া গত্যন্তর নেই। আমরা নির্বাচনের মাধ্যমে তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফার বাস্তবায়ন করব। এই রূপরেখা কেবল রাজনৈতিক সংস্কারের নির্দেশনা নয় বরং একটি ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র কাঠামোর রূপরেখা। যেখানে থাকবে ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতা এবং জনকল্যাণের নিশ্চয়তা।
অপরাধচিত্র : মননোয়নের বেলায় কতোটা আশাবাদী। নির্বাচিত হলে এলাকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কি কি পদক্ষেপ নিবেন?
আকন কুদ্দুসুর রহমান : প্রথমত মনোনয়ন নিয়ে বলব, আমার নির্বাচনী এলাকার দলমত নির্বিশেষে সকল স্তরের মানুষ চাইছেন আমি নির্বাচন করি। বিষয়টি দলের নেতৃত্ব পর্যায়েও আলোচিত হয়েছে। সর্বোপরি বলা যায় মনোনয়নের বিষয়ে দলীয় হাইকমান্ড দেশের সবক’টি আসনে জরিপ চালিয়েছে। সেখানেও মনোনয়নের বিষয়টা প্রায় নিশ্চিত বলেই জানি। সর্বোপরি মনোনয়ন পাওয়া কিংবা না পওয়া বিষয় না। সবকিছুর উর্ধ্বে আমরা বিএনপির কর্মী। দলের যাতে ভালো হয় সেটাই আমাদের প্রথম প্রায়োরিটি।
দ্বিতীয়ত জনগণের প্রত্যাশা পূরণের প্রশ্নটি। আমি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই, সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ বজায় রাখার ক্ষেত্রে আমরা ঐক্যবদ্ধ। রাজনীতি হোক নীতি, আদর্শ ও জনসেবার ভিত্তিÑ এটিই আমার কাছে মূল নীতি। কোনো অপপ্রচার নয়, কোন ব্যক্তিগত আক্রমণর নয়। আমরা সকলেই জনগণের সেবক হতে চাই। শুধু নির্বাচিত হলেই সবকিছু করতে হবে এমন নয়- দুর্নীতি, মাদক, দখলবাজী, চাঁদাবাজীর বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন ছিলো এবং এটি অব্যাহত থাকবে।
আমরা তরুণ প্রজন্মকে সাথে নিয়ে একটি ন্যায়পরায়ণ রাষ্ট্র গঠনে মনোযোগী হব। তরুণ প্রজন্মের মাঝে নেতৃত্বের, আদর্শের গুণাবলি ছড়িয়ে দিতে হবে। আগামীর এমন একটি স্বনির্ভর বাংলাদেশ তাদের হাতে তুলে দিতে চাই যেখানে শহীদ জিয়ার আদর্শ প্রতিফলিত হবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাহস এবং তারেক রহমানের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপায়নের মাধ্যমেই গড়ে উঠবে নতুন বাংলাদেশ, স্বপ্নের বাংলাদেশ।