নিজস্ব প্রতিবেদক :
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতন হলেও শাসনব্যবস্থার কোনো পরিবর্তন ঘটেনি বলে মন্তব্য করেছেন সাতটি বাম দল নিয়ে গঠিত ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার নেতারা। ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার সমালোচনা করে তাঁরা বলেছেন, চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও বুর্জোয়া শক্তি ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী প্রভাবের কারণে তাঁকে ক্ষমতায় বসানো হয়েছে।
আজ শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবীর মিলনায়তনে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় নেতারা এসব কথা বলেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার সমন্বয়ক ও গণমুক্তি ইউনিয়নের সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন আহম্মদ নাসু। সঞ্চালনা করেন বাসদের (মাহবুব) কেন্দ্রীয় সদস্য মহিউদ্দিন চৌধুরী লিটন।
সভায় বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গণ-আন্দোলনের লক্ষ্যে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়ে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার ফাঁদ পেতেছে। দেশের প্রতি চারজন নাগরিকের একজন চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছে। কৃষি ও শিল্প খাতে বাণিজ্যিক চুক্তি করে স্থানীয় অর্থনীতি ধ্বংস করা হচ্ছে। সিন্ডিকেট ব্যবসা, ঘুষ-দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, নারী-শিশু নির্যাতন ও মৌলবাদী সন্ত্রাস রোধে সরকার ব্যর্থ হয়েছে।
বাম মোর্চার নেতাদের অভিযোগ, চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানির কাছে ইজারা, রাখাইনে মানবিক করিডর দেওয়া এবং বিদেশি সামরিক সরঞ্জাম কারখানা স্থাপনে অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত দেশকে সাম্রাজ্যবাদী সংঘাতে জড়াচ্ছে, যা দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলছে।
সভায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের রক্তের দাগ শুকানোর আগেই হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন ছাড়া মুক্তি মিলবে না।
জাতীয় গণফ্রন্টের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রজত হুদা বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানুষ যে বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন দেখেছিল, তা পূরণ হয়নি।
গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন ও সাম্যভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দেশের সব বামপন্থী দলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণবিরোধী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই চালানোর আহ্বান জানান বাম মোর্চার নেতারা।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাসদের (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চের আহ্বায়ক মাসুদ খান, ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের সংগঠক সুনয়ন চাকমা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের আহ্বায়ক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান লালটু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির কার্যকরী সভাপতি আবদুল আলী প্রমুখ।