নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বড় কোকেনের চালান জব্দ করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। গতকাল বুধবার রাতে দক্ষিণপূর্ব আফ্রিকার দেশে মালউয়ের এক নারী ৮ কেজি ৩০০ গ্রামের এ কোকেনের চালানটি বাংলাদেশে নিয়ে আসনে। পরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিএনসি জানায়, কোকেনের এই চাকানটি আফ্রিকার দেশ মালউ অথবা ইথোপিয়া থেকে বাংলাদেশে এসেছে। চালানটি পাচার করার জন্য বাংলাদেশকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল। কারণ এই পরিমাণ কোকেনের চাহিদা বাংলাদেশে নেই।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ডিএনসির উত্তর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব তথ্য জানান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন) তানভীর মমতাজ।
তিনি বলেন, ‘কোকেন চোরাচালানের আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেটের দেশি ও বিদেশি সক্রিয় কয়েকজন সদস্য বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করার উদ্দেশে কোকেনের একটি বৃহৎ চালান আফ্রিকা থেকে কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে একজন আফ্রিকান নাগরিকের মাধ্যমে ঢাকায় আসবে এমন তথ্য পাই আমরা। এরপর থেকে আমরা বিমানবন্দর এলাকায় নজরদারি বাড়াই। এর ভিত্তিতে গতকাল বুধবার এপিবিএনকে সঙ্গে নিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি টিম বিমানবন্দরের ৮ নম্বর টার্মিনালের বোর্ডিং ব্রিজ এলাকায় অবস্থান করে। ফ্লাইটিতে নামা সব বিদেশি যাত্রীদের আমরা ফলো করি।’
এর মধ্যে দেখা যায়, নোমথেনডাজো তাওয়েরা সোকো নামে এক বিদেশি নারী বিমানবন্দরের নিচতলায় ভিসা অন অ্যারাইভাল ডেস্কে দীর্ঘক্ষণ ধরে অবস্থান করছেন। তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে সন্দেহজনক হওয়ায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেন লাগেজে অবৈধ মাদকদ্রব্য কোকেন আছে। পরে লাগেজের ভেতরে বিশেষভাবে রক্ষিত আট কেজি ৩০০ গ্রাম কোকেন জব্দ করা হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘নোমথেনডাজো তাওয়েরা সোকো আফ্রিকান দেশ মালউয়ের নাগরিক। তিনি প্রথমে মালউ থেকে ইথোপিয়া যান। পরে তিনি ইথোপিয়া থেকে যান দোহাতে এবং দোহা থেকে কাতারের এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে বাংলাদেশে আসেন। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি তার বাংলাদেশ থেকে আবারও মালউতে যাওয়ার কথা ছিল। কোকেনের এ চালানটি বাংলাদেশকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করার কথা ছিল। পরে বাংলাদেশ থেকে কোকেনের চালানটি অন্য কোনো দেশে চলে যেত। আমাদের ধারণা তাওয়েরা সোকো কোকেনের এ চালানটি মালউ অথবা ইথোপিয়া থেকে সংগ্রহ করেছেন।’
জিজ্ঞাসাবাদে সোকো জানান, গতবছর তিনি বাংলাদেশে একবার এসেছিলেন গার্মেন্টস ব্যবসার কথা বলে। এবারও তিনি বাংলাদেশের একটি গার্মেন্টসের আমন্ত্রণপত্র নিয়ে আসেন। অন অ্যারাইভাল ভিসা নেওয়ার জন্য তিনি তার পরিচয় লুকিয়ে গার্মেন্টস ব্যবসার নাম করে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন। সোকো মালউতে পেশায় একজন নার্স। তিনি মূলত কোকেনের এ চালানের বহনকারী। বাংলাদেশে তিনি আরেক জন বিদেশি নাগরিকের কাছে এ চালান পৌঁছে দিয়ে নিজ দেশে চলে যাওয়ার কথা ছিল।
বাংলাদেশে সোকো কার কাছে কোকেন হস্তান্তর করতেন জানতে চাইলে ডিএনসির এ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করছি। তবে বাংলাদেশ অবস্থানরত কয়েক জন বিদেশি নাগরিকের কাছে এ কোকেন যাওয়ার কথা ছিল। আমরা একজন বিদেশিকে সন্দেহ করছি। তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে বেশি কিছু বলতে চাচ্ছি না, আমরা আশা করি চক্রটিকে ধরতে পারব।’
২০২৩ সালে সোকো বাংলাদেশে কোকেনের চালান নিয়ে এসেছিলেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তখনো তিনি গার্মেন্টস ব্যবসার নাম করে এসেছিলেন। তিনি আসলে কীসের জন্য এসেছিলেন সেই বিষয়ে আমরা তদন্ত করছি।’
কোকেনের এ আন্তর্জাতিক চক্রের সঙ্গে বাংলাদেশের কেউ জড়িত আছে কি না জানতে চাইলে ডিএনসির এ কর্মকর্তা বলেন, ‘কোকেনের চালানের সঙ্গে দেশি এবং বিদেশি চক্র জড়িত আছে। এ চক্রটিকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি।’
কোকেনের চালানটি বাংলাদেশ থেকে কোনো দেশে যাওয়ার কথা ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এগুলো আমরা আমাদের তদন্ত শেষে বলতে পারব। তবে এটা বলতে চাই কোকেনের চালানটি বাংলাদেশের জন্য ছিল না। কারণ বাংলাদেশে এ পরিমাণ কোকেন কনজিউম করার মার্কেট নেই। এ কোকেনের আনুমানিক বাজার দর ১০০ কোটির ওপরে। দেশের ইতিহাসে সলিড কোকেনের এটিই সর্ববৃহৎ চালান।’