নিজস্ব প্রতিবেদক :
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসাবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের শপথ নিয়ে তৈরি জটিলতার সমাধানে নির্বাচন কমিশনকে সংবিধানের আলোকে সিদ্ধান্ত নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে আপিল বিভাগ।
ইশরাকের শপথ না পড়ানো ইস্যুতে খারিজ করা রিটের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে এই পর্যবেক্ষণ জানিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
সেইসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী দেওয়া ব্যাখ্যারও সমালোচনা করেছে আপিল বিভাগ। শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মূল বার্তা ছিলো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের আত্মমর্যাদা ও আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনা।
সর্বোচ্চ আদালত বলেছেন, নির্বাচন কমিশন একটি শক্তিশালী সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। নির্বাচন কমিশন কেনো মন্ত্রণালয়ের মুখাপেক্ষী হবে। নির্বাচন কমিশন শপথের বিষয়ে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত না নিয়ে কেন মন্ত্রণালয়ে মতামতের জন্য পাঠাবে। নির্বাচন কমিশন তার কাজ করার ক্ষেত্রে স্বাধীন।
গেলো ২৭ মার্চ এক রায়ের মাধ্যমে ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায়ে বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ঘোষণা করা হয়। আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে এক মাস পর ২৯ এপ্রিল নির্বাচন কমিশনও তাঁকে মেয়রের স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে।
তবে নির্বাচন কমিশনের গেজেট প্রকাশকে অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হলে আটকে যায় ইশরাকের শপথ নেয়া। গেলো ২২ মে উচ্চ আদালত সেই রিট খারিজ করে দিলেও শপথ নিতে পারেননি ইশরাক। শপথ ঠেকাতে রিটকারী সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেন।
সেই আপিলের শুনানিতে বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের ব্যাখ্যা শুনেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগ। আদালতে ইসির পক্ষে শুনানি করেন ড. মো. ইয়াছিন খান। রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হোসেন। ইশরাকের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
সাংবিধানিক ও স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হওয়া স্বত্বেও, নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার পরও কমিশন কোন পদক্ষেপ না নিয়ে কেনো আইন মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা চাইলো এই প্রশ্ন তুলে ভর্ৎসনা করে আপিল বিভাগ। এই প্রসঙ্গে জুলাই বিপ্লবের পর জাতির আকাঙ্ক্ষার কথা কমিশনকে স্মরণ করিয়ে দেন প্রধান বিচারপতি।
পরে কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে সংবিধানের আলোকে ইশরাকের বিষয়টি সমাধান করার তাগিদ দিয়ে রিট নিষ্পত্তি করেন। রিটকারীর আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন জানান, কমিশনের উচিত নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা। অন্যথায় তারা আইনি পদক্ষেপ নেবেন। এখন গেজেটের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। শপথ পড়ানোর কোনো সুযোগ নেই আর।
নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, আপিল বিভাগ পর্যবেক্ষণ দিলেও নির্বাচনী গেজেট স্থগিত করা হয়নি, বহাল আছে। আশা করি, সরকার তাকে শপথ পড়াবে, এটা সরকারের দায়িত্ব ছিল তাকে শপথ পড়ানো। আদালত পর্যবেক্ষণ হাতে পেলে তারা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।
তিনি আরও বলেন, তারা গেজেট স্থগিত চেয়েছিল, তা স্থগিত করেননি আপিল বিভাগ। আদালত পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন যে, নির্বাচন কমিশন স্বাধীন ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তারাই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবে এবং তাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে। ইসি আপিল করার যুক্তি না থাকায় আপিল করবে না বলে আগেই জানিয়েছে। আজকে আদেশ হলো, আবেদনকারীকে লিভ দেননি, কোনো স্থগিতাদেশ দেননি। নিষ্পত্তি করে বলেছেন ইসির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে। এখন নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিবে। সিদ্ধান্তের আলোকে সরকার শপথ পড়াতে বাধ্য।