নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানী ঢাকায় বৃষ্টি মানেই অচলাবস্থা। সামান্য বৃষ্টিতেই নগরের রাস্তাঘাট তলিয়ে যায় পানির নিচে। তবে এবার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বুধবার ভোর থেকে শুরু হওয়া ভারী বর্ষণে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটির বহু এলাকায় হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি জমে যায়। এতে অফিসগামী, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ পড়েছেন চরম দুর্ভোগে।
ঢাকা উত্তর সিটির মিরপুর-১০, কালশী, শেওড়াপাড়া, কচুক্ষেত, তুরাগ ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে যায়। কোথাও হাঁটুসমান, কোথাও আবার গর্তে জমে থাকা দুর্গন্ধযুক্ত পানি পার হতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হয় পথচারীদের। যান চলাচল ব্যাহত হয়ে তৈরি হয় দীর্ঘ যানজট।
অন্যদিকে দক্ষিণ সিটির জুরাইন, গেণ্ডারিয়া, মুগদা, মেরাদিয়া, খিলগাঁও, আরামবাগ, মতিঝিল ও পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় একই চিত্র দেখা গেছে। স্থানীয়রা জানান, পানির সঙ্গে সড়কের গর্ত মিশে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্যও ঝুঁকি তৈরি করছে। দোকানপাট ও বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় অনেকে অতিরিক্ত ভোগান্তির শিকার হয়েছেন।
রাস্তার কোথাও কোমরসমান, কোথাও হাঁটুসমান পানি। জমে থাকা নোংরা পানি পার হতে গিয়ে ভিজে যাচ্ছে পথচারীদের জামাকাপড়। বাস,অটোরিকশা ও রিকশা চালকরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকছেন যানজটে। এতে কর্মজীবী মানুষের সময় নষ্ট হচ্ছে, আর পরিবহন শ্রমিকদের আয়ও কমে যাচ্ছে। দোকানপাটে পানি ঢুকে পড়ায় ব্যবসায়ীদের ক্ষতিও বাড়ছে।
পানি নামার পর রাস্তাজুড়ে কাদা ও ভাঙা ইটের স্তূপ তৈরি হওয়ায় পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। কোথাও মোটরসাইকেল গর্তে আটকে পড়ছে, কোথাও রিকশার চাকা থেমে যাচ্ছে নর্দমার ইটপাথরে। দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন অনেকে।
অনেক নগরবাসীর অভিযোগ, এলাকায় কার্যকর ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। খোঁড়া ড্রেনও সময়মতো সম্পন্ন হয় না বা অল্পদিনের মধ্যেই অকার্যকর হয়ে পড়ে। মিরপুর-১০ গোলচত্বরের মুদি দোকানদার খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিদিন দোকান খুলেই দেখি পানি ভরে গেছে। বর্জ্যের দুর্গন্ধে ব্যবসা চালানোই মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও প্রাকৃতিক খাল ভরাটের কারণে জলাবদ্ধতা দিন দিন তীব্র হচ্ছে। নালা-নর্দমার অব্যবস্থাপনা, খোলা জায়গার অভাব ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ত্রুটির কারণে পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হচ্ছে। শুধু রাস্তা সংস্কার নয়, খাল উদ্ধার, সঠিক নকশায় ড্রেন নির্মাণ ও নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত না হলে এ সমস্যার সমাধান হবে না।
অন্যদিকে সিটি করপোরেশন দাবি করেছে, তারা নিয়মিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা পরিষ্কার করছে। তবে অবৈধ দখল ও জনগণের অসচেতনতায় সমস্যা জটিল হচ্ছে। অনেকে ড্রেনে ময়লা ফেলায় পানি জমে থাকে।
পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, যানজটে আটকে থাকায় প্রতিদিন তাদের কয়েকটি ট্রিপ কমে যায়। এতে আয় কমে পরিবার চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে। দোকানপাটের ক্ষতিও বাড়ছে। ফলে নগরবাসীর দুর্ভোগের পাশাপাশি অর্থনৈতিক চাপও বেড়ে যাচ্ছে।
এমন অবস্থায় রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। তাদের মতে সঠিক নকশা, খাল উদ্ধার, নিম্নাঞ্চলের বিশেষ পরিকল্পনা ও রাস্তা উঁচু করার পাশাপাশি বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। একই সঙ্গে নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে।
এদিকে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ২০৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে-যা অতি ভারী বৃষ্টিপাতের মধ্যে পড়ে। আজ সকাল ৭টার পরবর্তী ৬ ঘণ্টায়ও ঢাকাসহ আশপাশে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে।
আজ সকাল ৬টায় ঢাকার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৯৮ শতাংশ। গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় ৮৮ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি অতি ভারী হিসেবে ধরা হয়। সেই হিসেবে ঢাকায় রেকর্ড হওয়া ২০৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতকে অস্বাভাবিক ও বিরল হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে।