নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আজ ৮৯তম জন্মবার্ষিকী। দিনটি উপলক্ষে জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের কর্মসূচি রাখা হয়েছে দলের পক্ষ থেকে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আজ ৮৯তম জন্মবার্ষিকী। দিনটি উপলক্ষে জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের কর্মসূচি রাখা হয়েছে দলের পক্ষ থেকে। দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশের সব কার্যালয়ে। দৈনিক সংবাদপত্রে প্রকাশ করা হবে বিশেষ ক্রোড়পত্র।
বগুড়ার গাবতলীর বাগবাড়ীতে ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন জিয়াউর রহমান। তার বাবা মনসুর রহমান পেশায় ছিলেন একজন রসায়নবিদ। বগুড়া ও কলকাতায় শৈশব-কৈশোর অতিবাহিত করার পর জিয়াউর রহমান চলে যান বাবার কর্মস্থল করাচিতে। শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৫৫ সালে তিনি পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে অফিসার হিসেবে কমিশন লাভ করেন। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধে খেমকারান সেক্টরে অসীম সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন।
জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে অস্ত্র হাতে অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধে। যুদ্ধ শেষে আবার সেনাবাহিনীর পেশাদার জীবনে ফিরে যান। সময়ের প্রয়োজনে ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। তার প্রতিষ্ঠিত দল তিনবার রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয়। ১৯৮১ সালের ৩০ মে একদল বিপথগামী সেনাসদস্যের হাতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে শাহাদতবরণ করেন এ রাষ্ট্রনায়ক। জিয়াউর রহমানের সৈনিক ও রাজনৈতিক জীবনের সততা, নিষ্ঠা ও নিরলস পরিশ্রম প্রতিটি মানুষ এখনো শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে।
জিয়াউর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে গতকাল এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন (জেডআরএফ)। রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় শহীদ আবু সাঈদ আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। জিয়াউর রহমানের বড় সন্তান তারেক রহমান বলেন, ‘দেশের প্রয়োজনে, মানুষের প্রয়োজনে সময়ের দাবিতে জিয়াউর রহমানকে তিনভাবে দেখতে পাই। প্রথমত, একজন সৈনিক হিসেবে। একজন সৈনিকের প্রতিশ্রুতি হচ্ছে, দেশকে রক্ষা করা, দেশের মানুষকে রক্ষা করা। আমরা দেখেছি, যখন সময় এসেছে দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করার বা ছিনিয়ে আনার, দেশের মাটিকে শত্রুর কবল থেকে রক্ষা করার সেই সময় জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন।’
দেশের প্রয়োজনে পরিস্থিতির কারণে জিয়াউর রহমান রাজনীতিবিদ হিসেবে সামনে এসেছেন বলে উল্লেখ করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘রাজনীতিবিদ হিসেবে (জিয়াউর রহমান) যখন কাজ শুরু করলেন, দেখেছি, তিনি ঢাকা শহরে বসে থাকেননি। একজন রাজনীতিবিদের কাজ যেহেতু মানুষের জন্য রাজনীতি করা। তিনি মানুষের কাছে ছুটে গিয়েছেন। ১৯ দফা দিয়েছেন, তা দিয়ে জাতিকে বিভক্ত না করে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন। ধর্ম-বর্ণ সবকিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে পরিচয় দিয়েছেন আমরা বাংলাদেশী। রাজনীতিবিদ হিসেবে সফল হওয়ার কারণেই উনি চলে যাওয়ার পরও আমরা এ দলকে মানুষের মধ্যে ধরে রাখতে পেরেছি।’
তারেক রহমান বলেন, ‘এরপর যদি দেখি একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে। রাষ্ট্রনায়কের কাজ হচ্ছে দেশের মানুষকে সঠিকভাবে পরিচালনা করা। মানুষের সমস্যার সমাধান করা। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের যে সোর্স, এর মধ্যে একটি গার্মেন্ট শিল্প, আরেকটা প্রবাসী আয়—এ দুটোয় জিয়াউর রহমানের অবদান আছে। রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বিবেচনা করলে সার্কের কথা এসে যায়। সার্ককে বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে উনি কীভাবে বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন।’
এক বাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘জাতীয়তাবাদী দর্শনের প্রবক্তা ক্ষণজন্মা রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমান দেশের ক্রান্তিকাল উত্তরণে ছিলেন জাতির দিশারি। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান সামরিক বাহিনী বাংলাদেশের জনগণের ওপর আক্রমণ করার পর তিনি পাকিস্তানি অধিনায়ককে বন্দি করে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ২৬ মার্চ তিনি চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেন অসীম বীরত্বে। সেদিন থেকেই দেশবাসী তার অসাধারণ নেতৃত্বের পরিচয় পায়। স্বাধীনতা-উত্তর দুঃসহ স্বৈরাচারী দুঃশাসনে চরম হতাশায় দেশ যখন নিপতিত, জাতি হিসেবে আমাদের এগিয়ে যাওয়া যখন বাধাগ্রস্ত হয়, ঠিক সেই সংকটের এক পর্যায়ে জিয়াউর রহমান জনগণের নেতৃত্বভার গ্রহণ করেন।’