নিজস্ব প্রতিবেদক :
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসব রথযাত্রা উৎসব শুরু হয়েছে । এ উপলক্ষে আজ শুক্রবার (২৭ জুন) সকাল থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে পালিত হচ্ছে এ উৎসব। এ এ উপলক্ষে বিকেল ৩টায় রাজধানীর স্বামীবাগ ইসকন মন্দির থেকে শুরু হয় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রথযাত্রা। শোভাযাত্রাটি ইত্তেফাক মোড়, মতিঝিল, বায়তুল মোকাররম, প্রেসক্লাব ও হাইকোর্ট মোড় হয়ে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে শেষ হয়। নয় দিনব্যাপী এই বর্ণাঢ্য ধর্মীয় উৎসবের আয়োজন করেছে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন), বাংলাদেশ।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, জগন্নাথ দেব হলেন জগতের ঈশ্বর। তার অনুগ্রহ পেলে মানুষের মুক্তিলাভ ঘটে এবং জীবরূপে আর জন্ম নিতে হয় না। এই বিশ্বাস থেকেই ভক্তরা জগন্নাথ, বলরাম ও শুভদ্রার প্রতিকৃতি রথে স্থাপন করে টেনে নিয়ে যান এক মন্দির থেকে অন্য মন্দিরে। এই উৎসবকে ঘিরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বসছে মেলা। দূরদূরান্ত থেকে আসেন ভক্ত ও দর্শনার্থীরা। দিনটির জন্য ভক্তরা বছর ধরে অপেক্ষায় থাকেন।
এ বিষয়ে ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারুচন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী জানান, ভারতের পুরীর রথযাত্রার পর ঢাকার রথযাত্রা পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম রথযাত্রায় পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশে প্রতিবছর ইসকনের আয়োজনে ১২৮টির বেশি রথযাত্রা হয়, যা দেশের ইতিহাসে অভূতপূর্ব। এছাড়াও বিভিন্ন মন্দিরের আয়োজনে রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। রথযাত্রা উৎসবের প্রথম দিন আজ শুক্রবার সকালে বিশ্বশান্তি কামনায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞ দিয়ে দিন শুরু হয়। এরপর সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত হয় ১০৮টি অগ্নিহোত্র যজ্ঞ। ১২টায় ভাগবতীয় আলোচনা করেন চারুচন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী। সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভার পর আড়াইটায় রথের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার উদ্বোধন হয়। বিকেল ৩টায় রথযাত্রাটি স্বামীবাগ আশ্রম থেকে শুরু হয়ে জয়কালী মন্দির, ইত্তেফাক মোড়, শাপলা চত্বর, দৈনিক বাংলা মোড়, বায়তুল মোকাররমের উত্তর পার্শ্ব, পল্টন মোড়, প্রেসক্লাব, কদম ফোয়ারা, হাইকোর্ট মাজার, দোয়েল চত্বর, শহীদ মিনার, জগন্নাথ হল ও পলাশী মোড় হয়ে গন্তব্যস্থল ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে গিয়ে শেষ হয়। সন্ধ্যা আরতির পর রাত ৮টায় ইসকন মন্দিরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নৃত্যনাট্য হবে।
তিনি আরো জানান, ৯ দিনব্যাপী উৎসবজুড়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ আয়োজন থাকছে। আজ থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক আয়োজন চলবে। এতে থাকছে: শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত পাঠ, জগন্নাথ লীলামৃত পাঠ, রথযাত্রার মাহাত্ম্য বিষয়ক আলোচনা, সন্ধ্যা-আরতি, ভজন-কীর্তন মেলা ও বৈদিক নাটক।
চারুচন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী বলেন, রথযাত্রা উৎসব এখন একটি সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সব ধরনের সহযোগিতা করছে। সরকারও সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ইসকন সম্পর্কে নানা গুজবের বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ইসকন যদি জঙ্গি সংগঠন হতো, তাহলে সরকার এত বড় রথযাত্রার অনুমতি দিত না।
উল্লেখ্য, উৎসবের শেষ দিন ৫ জুলাই শনিবার, ঢাকেশ্বরী মন্দিরে অনুষ্ঠিত হবে উল্টো রথযাত্রা। এ উপলক্ষে থাকবে ড. তাপসী ঘোষের পদাবলী কীর্তন, আলোচনা সভা ও রথের শোভাযাত্রা, যা ঢাকেশ্বরী থেকে পুনরায় স্বামীবাগ ইসকন মন্দিরে গিয়ে পৌঁছাবে।