সাভার প্রতিনিধি :
সাভারের আশুলিয়ায় বিভিন্ন দাবিতে গত কয়েক দিনের চলমান শ্রমিক বিক্ষোভের জেরে ২৬টি তৈরি পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বুধবার এই ঘোষণা দেয় সংশ্লিষ্ট কারখানা কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া আরও অন্তত আটটি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। কোথাও কোনো ধরনের সড়ক অবরোধ বা বিক্ষোভের খবর পাওয়া যায়নি। তবে শিল্পাঞ্চলের অন্যান্য কারখানাসহ ঢাকা ইপিজেডের কারখানাগুলো চালু রয়েছে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশুলিয়ার কাঠগড়া থেকে জিরাবো এলাকায় অধিকাংশ তৈরি পোশাক কারখানার মূল ফটকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার নোটিশ টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে আশুলিয়ার নরসিংহপুর, ইউনিক, জামগড়া, বেরন এলাকার হা-মীম গ্রুপ, শারমিন গ্রুপ, এনভয় কমপ্লেক্স, হলিউড গার্মেন্টস প্রাইভেট লিমিটেড, স্টারলিং এ্যাপারেলস লিমিটেড, ভার্চুয়াল বটয়ম, মন্ডল নিটওয়্যারস লিমিটেড, সিগমা ফ্যাশনস লিমিটেড, ক্রশওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিস লিমিডেট, জিন্স প্রোডিউসার লিমিটেড, অরুণিমা গ্রুপের অরুনিমা স্পোর্টসওয়্যার লিমিটেড, ডিএমসি অ্যাপারেলস লিমিটেড, এস এম নিটওয়্যারস লিমিটেড, আজমত গ্রুপের আজমত এ্যাপারেলস লিমিটেড, জেড-থ্রি কম্পোজিট নিটওয়্যার লিমিটেড ও জি-থ্রি ওয়াশিং প্যান্ট লিমিটেড, এনভয় কমপ্লেক্স, আগামী অ্যাপারেলস লিমিটেড, মানতা অ্যাপারেলস লিমিটেডসহ বেশকিছু কারখানার সামনের ফটকে একই নোটিশ টানানো হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়েছে ‘গাজীপুর, সাভার ও আশুলিয়াসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পোশাক শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবিকে কেন্দ্র করে গার্মেন্টস কারখানায় ভাঙচুরসহ হট্টগোল চলছে। বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকেরা উত্তেজিত হয়ে আমাদের কারখানায় ভাঙচুর চালানোর চেষ্টা করে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বুধবার থেকে শ্রম আইন-২০০৬ এর ১৩ (১) ধারা অনুসারে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হলো।
শ্রম আইন-২০০৬ এর ১৩ (১) ধারাতে বলা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠানের কোনো শাখা বা বিভাগে বে-আইনি ধর্মঘটের কারণে মালিক উক্ত শাখা বা প্রতিষ্ঠান আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে পারবেন; এমন বন্ধের ক্ষেত্রে ধর্মঘটে অংশগ্রহণকারী শ্রমিকেরা কোনো মজুরি পাবেন না।
কয়েকটি কারখানায় শ্রমিকেরা নির্দিষ্ট সময়ে কারখানায় উপস্থিত হলেও বন্ধ থাকায় বাড়ি ফিরে যান। শ্রমিকরা জানায়, সকালে আসছি কাজ করতে। হা-মীম, শারমিন গার্মেন্টস বন্ধ দিছে দেখে অনেকে কাজ করে নাই। তাই আমাদের কারখানাও ছুটি দিছে। এমন পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে এসব সড়কে টহল দিচ্ছে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। বিভিন্ন কারখানার সামনে মোতায়েত রয়েছে অতিরিক্ত সেনা, পুলিশ ও এপিবিএন সদস্য।
শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম জানান, সকাল থেকে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের কোথাও কোনো সড়ক অবরোধ, কারখানায় হামলা বা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি। সকালে সাভার-আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের প্রায় সব কারখানায় কাজে যোগ দেয় শ্রমিকেরা। বেশিরভাগ কারখানাতেই উৎপাদন স্বাভাবিক রয়েছে। তবে আগে থেকেই কিছু কারখানায় অভ্যন্তরীণ বেশ কিছু দাবি দাওয়া নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষ চলছিল। সেসব কারখানার শ্রমিকেরা কাজে ফেরেনি। এরকম ২৬টি কারখানায় শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা অনুযায়ী বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া আজকের জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে আরও চার থেকে পাঁচটি কারখানা।
অন্যদিকে শিল্পাঞ্চলে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কারখানাগুলোর সামনে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য। পাশাপাশি শিল্পাঞ্চলে যৌথবাহিনীর টহলও অব্যাহত রয়েছে।