জাহিদ হাসান, নেত্রকোনা প্রতিনিধি :
নেত্রকোনার কলমাকান্দায় এক শিখা আক্তার নামের এক গৃহবধূকে মারধরের পর মাথার চুল কেটে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ননদ ও ননদের স্বামীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় থানায় আজ মামলা হয়েছে।
কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ লুৎফুল হক আজ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মঙ্গলবার বিকেলে প্রত্যন্ত হাওরাঞ্চল উপজেলার পোগলা ইউনিয়নের কুঁতিগাও গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর নাম শিখা আক্তার শিল্পী (৩৩)। তিনি উপজেলার কুঁতিগাও গ্রামের মৎস্য ব্যবসায়ী মো. ফজলুল হকের স্ত্রী। আর অভিযুক্তরা হলেন শিখা আক্তার শিল্পীর ননদ একই গ্রামের রেশমা আক্তার (২০) ও তাঁর স্বামী মো. নয়ন মিয়া (২৬)।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুই বছর আগে রেশমার অন্যত্র বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের কিছুদিন পর প্রতিবেশী নয়নের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে রেশমার। ওই স্বামীকে ছেড়ে দেড় বছর আগে নয়নকে বিয়ে করেন রেশমা। কিন্তু রেশমার পরিবার এ বিয়ে মেনে নেয়নি। এ নিয়ে বড় ভাই ফজলুল হক ও তাঁর স্ত্রী শিখা আক্তার শিল্পীর প্রতি ক্ষিপ্ত ছিলেন রেশমা। এরই জেরে ওইদিন মাগরিবের নামাজের সময় ঘরে ঢুকে শিল্পীকে বেধড়ক মারধর করেন রেশমা ও তাঁর স্বামী নয়ন। একপর্যায়ে শিল্পীর চুল কেটে দেয় তাঁরা। পরে শিল্পীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন স্থানীয়রা।
এদিকে এ ঘটনায় শিল্পীর স্বামী ফজলুল হক বাদী হয়ে রেশমা ও তাঁর স্বামী নয়ন মিয়ার বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
ভুক্তভোগী শিখা আক্তার শিল্পী বলেন, ‘ঘটনার সময় বাড়িতে নিজের ঘরে একাই ছিলাম। মাগরিব নামাজ শেষে জায়নামাজে তসবিহ পাঠ করছিলাম। এ সময় ননদ রেশমা ও তার স্বামী নয়ন ঘরে ঢুকে আমাকে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। আমি চিৎকার করতে চাইলে আমার মুখ বেঁধে ফেলে। তখন আর চিৎকার করতে পারছিলাম না। পরে আমার মাথার চুল কেটে দেয়। তাদেরই চিৎকার চেঁচামেচিতে প্রতিবেশীরা দৌড়ে এসে আমাকে উদ্ধার করে কলমাকান্দা হাসপাতালে নিয়ে যায়।’
এ বিষয়ে নির্যাতিত গৃহবধূ শিল্পীর স্বামী মো. ফজলুল হক বলেন, ‘আমার বোন রেশমা প্রেম করে নয়নের সঙ্গে বিয়ে হয়। এ বিয়ে মেনে না নেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ঘরে ঢুকে মারপিট করে শিল্পীকে গুরুতর আহত করে রেশমা ও নয়ন। এ সময় ঘরে থাকা নগদ টাকা, স্বর্ণালংকারসহ আমার স্ত্রীর মাথার চুল কেটে নিয়ে যায় তারা। আমি এর ন্যায়বিচার চাই।’
ভুক্তভোগী শিল্পীর বাবা আব্দুল কুদ্দুছ বলেন, ‘আমার মেয়েকে ঘরে একা পেয়ে এমন নির্মম অপমান অপদস্ত করে মেরেছে, আমি এর বিচার চাই।’
রেশমার স্বামী মো. নয়ন মিয়া অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এ ঘটনার কিছুই জানি না। গতকাল সোমবার আমরা বাড়িতে ছিলাম না।’
এ বিষয়ে আজ কলমাকান্দা হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক সৌরভ ঘোষ জানান, শিল্পীর মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তিনি এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্র কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ লুৎফুল হক বলেন, ঘটনার পর রাতেই রেশমা ও নয়নকে ধরতে অভিযান চালানো হয়েছিল। তবে পুলিশের অভিযানের খবর পেয়ে তারা কৌশলে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভুক্তভোগীর স্বামী বাদী হয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আজ মামলা রেকর্ড করা হচ্ছে।