ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক চিকিৎসক দম্পতির বাসা থেকে তামান্না আক্তার নামে এক কিশোরী গৃহকর্মীর মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় অচেতন অবস্থায় ওই কিশোরীকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
তামান্নার বাবা-মায়ের অভিযোগ, তাদের মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। তাকে চিকিৎসক দম্পতি প্রায়ই নির্যাতন করতেন।
মারা যাওয়া তামান্না কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা মো. সুমন মিয়ার মেয়ে। সুমন মিয়া স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের ভাদুঘর এলাকায় বাবুল মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকেন। সেই সূত্র ধরে তামান্নাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মৌলভীপাড়ায় বাবুল মিয়ার মেয়ে ইসরাত আহমেদ ও জামাতা আনিসুল হকের বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজে দেওয়া হয়েছিল। ইসরাত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খ্রিস্ট্রিয়ান মেমোরিয়াল হাসপাতালে কর্মরত রয়েছেন। আনিসুল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক।
তামান্নার পরিবার জানায়, মঙ্গলবার বিকালে চিকিৎসক ইসরাতের বাবা বাবুল মিয়া সুমন মিয়াকে ফোন করে জানান, তামান্না গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। মরদেহ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রয়েছে। পরে সুমন তার স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে মেয়ের মরদেহ দেখতে পান। তাদের সামনেই হাসপাতালের লোকজন তামান্নার মরদেহ মর্গে নিয়ে যান।
তামান্নার খালু আবদুল কাদের বলেন, ‘চিকিৎসক দম্পতি আগে ঢাকায় থাকতেন। তামান্না তখন গৃহকর্মী হিসেবে তাদের সঙ্গে ঢাকায় থাকত। দুই বছর আগে এই দম্পতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলে আসেন। এরপর থেকে তাদের সঙ্গে মৌলভীপাড়ার বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করত তামান্না। তামান্নাকে মাসে ৩ হাজার টাকা বেতন দিতেন এই দম্পতি।’
তামান্নার বাবা সুমন মিয়া বলেন, ‘আমার মেয়ে যদি আত্মহত্যা করে তাহলে তার মরদেহ নামানোর আগে আমাদের জন্য অপেক্ষা করত। কারণ ভাদুঘর থেকে মৌলভীপাড়া যেতে ১০-১৫ মিনিট সময় লাগার কথা। কিন্ত তারা মরদেহ নিজেরাই হাসপাতালে নিয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত কয়েক দিন আগে মেয়ে জানিয়েছিল তারা (চিকিৎসক দম্পতি) তাকে প্রায়ই মারধর করে। তারা আমার মেয়েকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে।’
তামান্নার মা মুন্নি আক্তার বলেন, ‘১০-১৫দিন আগে মেয়ের সঙ্গে কথা হয়েছিল। তারা মারধর করে বলে জানিয়েছিল তামান্না। আমার কোল খালি কইরা মেয়ে চলে গেল।’
এদিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসক ইসরাত আহমেদকে দেখা যায়। গণমাধ্যমকর্মীদের দেখে মুখ ঢেকে তিনি সেখান থেকে চলে যান। গণমাধ্যমকর্মীরা কথা বলতে চাইলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক মির্জা মো. সাইফ বলেন, হাসপাতালে আনা মেয়েটিকে পরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করা হয়। হাসপাতালে আনার আগে তার মৃত্য হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত বলা যাবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেন বলেন, খবর পেয়ে হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বলা যাবে। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।