ঢাবি প্রতিবেদক :
দুয়েক দিনের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন গঠন করে ঈদুল আজহার ছুটির আগেই তফসিল ঘোষণার দাবি জানিয়েছে একদল শিক্ষার্থী।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশার সঙ্গে আলোচনার সময় তারা এই দাবি জানান। বিকাল সোয়া ৩টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিষয়টি তুলে ধরেন বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মুসাদ্দিক আলী ইবনে মুহাম্মদ।
তিনি বলেন, দীর্ঘ ৯ মাস অতিবাহিত হলেও এই রক্তের ওপর প্রতিষ্ঠিত প্রশাসন ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। একটি গোষ্ঠী চায় এই ডাকসু নির্বাচন বন্ধ করতে।
মুসাদ্দিক বলেন, সর্বশেষ প্রশাসন একটি টাইমলাইন ঘোষণা করেছিল। কিন্তু সে অনুযায়ী তারা তা করতে পারেনি। আগামী দুয়েকদিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে, তফসিল ঘোষণা করতে হবে।
ডাকসু কোনো সমস্যা না, এটি সকল সমস্যার সমাধান বলে মন্তব্য করে মুসাদ্দিক বলেন, শিক্ষার্থীদের ছাত্র সংসদ নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার তৎপরতা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে ছাত্র-জনতা আবার রাজপথে নেমে আসবে। দয়া করে ডাকসু ও নিরাপত্তা ইস্যু মুখোমুখি দাঁড় করাবেন না। নিরাপত্তা নিয়ে সমস্যা হলে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে আসত না।
আরেক শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, “এই মুহূর্তে ক্যাম্পাসে অধিকাংশ শিক্ষার্থী ডাকসু চাচ্ছে। যদি ডাকসু দেওয়া না হয়, তাহলে খুব শিগগির আমরা গণআন্দোলন গড়ে তুলব।”
তিনি বলেন, সাম্য ভাইয়ের হত্যাকে কেন্দ্র করে যে নিরাপত্তাহীন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, সেটাকে ডাকসুর মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে। ডাকসু হলে এই সমস্যা আর হবে না।
জুবায়ের বলেন, “প্রশাসন আমাদের আজ জানিয়েছে যে, তারা এই বিষয় নিয়ে কাজ করছে। তবে আমরা তাদের এই আশ্বাসে সন্তুষ্ট নই।”
এর আগে ১৫ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ বা পথনকশা প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সে অনুযায়ী, মে মাসের প্রথমার্ধে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করে মাসের মাঝামাঝি ভোটগ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশন গঠন করার কথা ছিল। মে মাসের তৃতীয় ভাগে গড়ালেও এখনো কোনো কমিশন গঠন করা হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দিয়ে রোডম্যাপের তথ্য দিয়েছিল। তবে তাতে তফসিল ও ভোটের চূড়ান্ত কোনো দিনক্ষণ ছিল না।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, বর্তমান প্রশাসন ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে।
একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য ডাকসু নির্বাচন সম্পাদনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকেই বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে। তার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দর এবং সুচারুভাবে আয়োজনের জন্য গৃহীত পদক্ষেপ এবং অগ্রগতি সম্বলিত রোডম্যাপ প্রকাশ করে।
বিশ্ববিদালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, গত বছর ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে চতুর্থ সপ্তাহে ব্যক্তি পর্যায়ের বিভিন্ন অংশীদারীর সঙ্গে আলোচনা ও পরামর্শ করা হয়। ২৪ ডিসেম্বর ডাকসু সংবিধান সংশোধন কমিটি গঠিত হয়। এ বছরের ১৫ জানুয়ারি ডাকসু নির্বাচন আচরণবিধি কমিটি গঠিত হয়, যা সিন্ডিকেটে অনুমোদনের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে।
জুনের প্রথমার্ধেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে বলে খবর ছিল। তবে মে মাস শেষ হতে চললেও নির্বাচন কমিশন গঠনের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। এই পরিপ্রেক্ষিত থেকে এক দল শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশার সঙ্গে ২২ মে আলোচনায় বসেন।
শতবর্ষী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এখন পর্যন্ত ৩৭ বার ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে ২৯ বারই হয়েছে ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলের ৫০ বছরে। স্বাধীন বাংলাদেশের ৫৩ বছরে নির্বাচন হয়েছে মাত্র মাত্র আটবার।
১৯৭৩ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুসারে, প্রতি বছর ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। ডাকসু মনোনীত পাঁচ শিক্ষার্থী প্রতিনিধি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিনেটের সদস্য হন। তারা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা ও সুযোগের বিষয় তুলে ধরেন সিনেটে।
২০১৯ সালে সর্ববেশ ডাকসু নির্বাচন হয়েছিল। সেই সংসদের মেয়াদপূর্তির পর পেরিয়ে গেছে আরো পাঁচ বছর। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব শূন্যতা চলতে দীর্ঘদিন ধরে।
গত বছর গণঅভ্যুত্থানে দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ডাকসু নির্বাচনের দাবি নিয়ে সোচ্চার হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠন। এই নির্বাচনের পক্ষে জোরালো মত রয়েছে দেশের বুদ্ধিজীবীদেরও।