নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও ‘গভীর’ করার জন্যই যুক্তরাষ্ট্র মাঝে মাঝে উপদেশ দেয় বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন। আর এসব উপদেশের মধ্যে যেগুলো ‘ভাল’ ও মানুষের ‘মঙ্গল’ হয় সেগুলো সরকার গ্রহণ করে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যে সংলাপের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে তাতে আওয়ামী লীগ পিছপা হবে না। কারণ, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সংলাপকে ভালো উদ্যোগ মনে করে।
যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের ৫০ বছরেরও বেশি সময়ের বন্ধু রাষ্ট্র উল্লেখ করে মোমেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকারও বারবার আমাদের এই ৫০ বছরের বন্ধুত্বের কথা বলছে।
‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী দেশ। যুক্তরাষ্ট্র একক দেশ হিসেবে আমাদের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ের (রপ্তানি) দেশ,’ যোগ করেন তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তারা (যুক্তরাষ্ট্র) আমাদের সাথে সম্পর্ক আরও গভীর করতে চায়। এবং সেজন্য সময় সময় তারা আমাদের অনেক উপদেশ দেয়।
‘আমরা সেই উপদেশগুলো যাচাই-বাছাই করে যেগুলো ভাল মনে হয়- আমাদের দেশের মানুষের মঙ্গলের জন্য, বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য। সেটা আমরা গ্রহণ করি।’
গত বুধবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে ভোট।
তবে বিএনপি ও তাদের আন্দোলনসঙ্গীরা সরকারের পতনের এক দফা দাবিতে হরতাল-অবরোধের নামে সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচিতে জড়িয়েছে। ভোটের তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি।
এরি মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বাংলাদেশের প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দল চিঠি পাঠিয়ে সংলাপের মাধ্যমে সংকট সমাধানের অনুরোধ জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে এ প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘সম্প্রতি তাদের থেকে একটা প্রস্তাব এসেছে যে, সংলাপ। আওয়ামী লীগ কখনো সংলাপে পিছপা না। আওয়ামী লীগ মনে করে সংলাপ ভাল।’
‘আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী দল এবং কখনো পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসেনি,’ বলেন মোমেন। তিনি যোগ করেন, ‘আওয়ামী লীগ সবসময় জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় গত কয়েক বছরে দেশে ‘কয়েকহাজার’ নির্বাচন করেছে এবং সেগুলোর সিংহভাগই সুষ্ঠু ও সুন্দর হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কাউকে বাধাগ্রস্ত করতে দেবো না। আর এই নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বন্ধু রাষ্ট্র যদি সহায়কের ভূমিকা পালন করে, তাহলে আমরা তাকে স্বাগত জানাবো।’
‘আমেরিকা বিভিন্নরকম বলছে। কিন্তু একটা সবসময় বলছে যে, তারা একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। তারা মাঝে মধ্যে যোগ করে সংঘাতবিহীন নির্বাচন।’
তবে এই উপমহাদেশের নির্বাচনের সময় ‘যথেষ্ট সংঘাত’ হওয়ার আশঙ্কা থাকে বলে উল্লেখ করেন মোমেন। তিনি বলেন, আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র পরিপক্ব একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, সেখানেও সংঘাত হয়। আমাদের দেশেও হয়। তবে দিনে দিনে কমছে।
সংঘাত দুর করতে সব দল ও মতের মানুষের ঐকান্তিক ইচ্ছা ও আন্তরিকতা থাকতে হবে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, ‘তারা (রাজনৈতিক দলগুলো) নির্বাচনমুখী হবে এবং আমরা অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে যেন মডেল নির্বাচন করতে পারি সেইভাবে তারা আমাদের সাহায্য করবে।’
এদিকে পৃথিবীতে বর্তমানে ১৭৩টি দেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কথা না বললেও বাংলাদেশের বিষয় নিয়ে কথা বলছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ নিয়ে প্রত্যেকদিনই আমেরিকার একটা বক্তব্য থাকে। এর কারণটা হলো আমাদের প্রবাসী বাঙালিরা। তারা তাদের ত্যক্ত করে। তারা তাদের জোর করে আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তাদের ইনভলড করার প্রচেষ্টা করে।’