চট্টগ্রাম প্রতিনিধি :
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান বলেছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে বিজিবির উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। আমাদের উপর অর্পিত যে দায়িত্ব আছে, সেটা আমরা যথাযথভাবে পালন করতে সক্ষম রয়েছি।
মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জতে অবস্থিত বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজে (বিজিটিসিএন্ডসি) বিজিবি’র ১০০তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিজিবি মহাপরিচাল এসব কথা বলেন।
বিজিপি মহাপরিচালক বলেন, সীমান্ত রক্ষার পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছি। এতে বিজিবি যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বর্তমানে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তাতে প্রতিদিনই সারাদেশে ২০০-২৫০ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতাইন থাকছে। দেশের ভেতরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে কেউ নষ্ট করতে না পারে সে বিষয়ে আমরা সতর্ক রয়েছি।
নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র চোরাচালন বন্ধে বিজিবি পক্ষ থেকে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে-এমন প্রশ্নের উত্তরে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, অবৈধ অস্ত্র আমাদের দেশে যাতে আসতে না পারে, সেজন্য সব সময় আমরা কাজ করি। এটা আমাদের নিত্য নৈমিত্তিক একটি রুটিন ওয়ার্ক। তারপরও এ বছর নির্বাচন বলে আমরা বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করছি। সীমান্ত দিয়ে যাতে কোন ধরনের গোলাবারুদ দেশে ঢুকতে না পারে বা কেউ নিয়ে আসতে না পারে সে বিষয়ে বিজিবির সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। অতীতের চেয়ে বর্তমানে অনেক বেশি অস্ত্র উদ্ধার করছে বিজিবি। আমরা এখন সর্বোচ্চ সতর্কতা অবস্থানে রয়েছি।
তিনি বলেন, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা কাজ আমরা দুটিই করছি। সীমান্ত নিরাপদে রাখা আমাদের মুল কাজ। সীমান্তে সবসময় আমরা গুরুত্বসহকারে কাজ করি। তবে আমি মনে করি, নির্বাচনের সময় সীমান্ত আরো বেশি সেনসিটিভ হয়ে যায়। সেজন্য আমরা বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করি।
মিয়ানমারের জাতিগত সংঘর্ষের ঘটনায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত সুরক্ষিত কিনা এবং দেশের কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না-সাংবাদিকরা এমন প্রশ্ন করলে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, পত্রপত্রিকায় দেখেছি, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ হচ্ছে। সে জন্য আমরা বাংলাদেশ সীমান্তে অনেক বেশি সতর্কতা বৃদ্ধি করেছি। যাতে করে মিয়ানমার থেকে কেউ কোন অবস্থায় আমাদের সীমানার ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে। কোনো মিয়ানমারের নাগরিক বা অস্ত্রধারী কেউ যাতে প্রবেশ করতে না পাড়ে সেজন্য বিজিবির প্রতিটি সদস্যই বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করছে।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালের ৫ ডিসেম্বর বাহিনীর ৩য় ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, “আজ আপনাদের কাছে আমি অনেক বড় কর্তব্য দিয়েছি, অনেক বড় কাজ দিয়েছি। এ কাজ হলো- চোরাচালানী বন্ধ করা। তোমাদের কাছে আমার হুকুম-স্মাগলিং বন্ধ করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি-তোমরা পারবে।”
জাতির পিতা সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের বিদায়লগ্নে নবীন সৈনিকদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, “যারা নতুন…আজকে বিডিআর-এ যোগদান করেছো, যারা শপথ গ্রহণ করলা, তাদের কাছে আমার কথা রইলো- ঈমানের সাথে কাজ করো, সৎপথে থেকো, দেশকে ভালোবাসো।”
বিজিবি মহাপরিচালক নবীন সৈনিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, সততা, আনুগত্য, কর্তব্যনিষ্ঠা ও শৃঙ্খলা- এই চারটি গুণের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে ‘সবার আগে দেশ, এরপর বাহিনীর স্বার্থ, অতঃপর অধীনস্থ ও সহকর্মীদের স্বার্থ এবং সর্বশেষে নিজের স্বার্থ’কে বিবেচনায় রেখে সবাইকে কাজ করতে হবে। শৃঙ্খলাই সৈনিকের মূলভিত্তি। আদেশ ও কর্তব্য পালনে যে কখনো পিছপা হয় না সে-ই প্রকৃত সৈনিক, বীরযোদ্ধা।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ১০০তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এবছর বাহিনীতে সীমান্ত রক্ষার শপথ নিয়েছেন ৩৮ জন নারীসহ ৫৮২ জন নবীন সৈনিক। নবীন সৈনিকদের প্রদর্শিত তেজোদীপ্ত কুচকাওয়াজের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন বিজিবি’র মহাপরিচালক।
বিজিবি মহাপরিচালক আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সানুগ্রহ পৃষ্ঠপোষকতা ও দূরদর্শী দিকনির্দেশনায় বিজিবি আজ একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ও অত্যাধুনিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। বিজিবি দিবস-২০১৯ এর অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন- ‘জাতির পিতার হাতে গড়া এই প্রতিষ্ঠান আগামীতে সারা বিশ্বে সর্বশ্রেষ্ঠ সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে মর্যাদা অর্জন করবে-সে বিশ্বাস আমার আছে।
প্রধানমন্ত্রীর এই প্রত্যাশা বিজিবি’র আধুনিকায়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হয়েছে উল্লেখ করে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, উন্নয়নের ক্রমধারায় বিজিবি’র সাংগঠনিক কাঠামোতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে এবং বিজিবি আজ ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে জল, স্থল ও আকাশপথে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালনে সক্ষম। বিজিবিতে যুক্ত হয়েছে অত্যাধুনিক হেলিকপ্টার, এপিসি, এটিভি, আরসিভি, এয়ার বোট, অত্যাধুনিক এন্টি ট্যাংক অস্ত্র, জলযানসহ আধুনিক সরঞ্জামাদি। ডিজিটাল বাংলাদেশের সাথে তাল মিলিয়ে বিজিবি’র রিক্রুটিং ব্যবস্থাকে ই-রিক্রুটিং এ রূপান্তর করা হয়েছে।
বিজিবি’র ১০০তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে বিজিবি’র উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসন ও পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত রয়েছেন।