নিজস্ব প্রতিদেক :
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ভয়ে মরা নয়, সাহস করে লড়াই করুন। পরিবর্তন করতে হলে তরুণ-যুবকদের এগিয়ে আসতে হবে। আওয়ামী লীগ দখলদার সরকার। তারা দেশকে ও দেশের রাজনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করেছে। দেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতাকে ধ্বংস করছে। কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
শনিবার (২৯ জুন) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে করে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল আরো বলেন, আজকে খেটে খাওয়া শ্রমিকরা চাল-ডাল, তেল কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। কেউ চিকিৎসা পায় না। লুট করে বিদেশে টাকা পাচার করেছেন। সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান লুটের সঙ্গে জড়িত। আমরা চিন্তা করতে পারি না। তিনি দেশের গণতন্ত্র ধ্বংসের সঙ্গে জড়িত। আজকে পুলিশের সাবেক প্রধান দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। এনবিআরের কর্মকর্তা জড়িত। এমন আরও অনেকেই আছে। কিন্তু রাঘববোয়ালদের ধরা হয় না।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া আমাদের গণতন্ত্র ও আন্দোলনের প্রতীক। তাকে রক্ষা করতে হলে ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে বলব- আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য লড়াইয়ে শামিল হই। তরুণ-যুবকদের হাতেই দেশের ভবিষ্যত। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তার প্রতি চরম অন্যায় করা হয়েছে। মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে তাকে নির্বাসিত করা হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, সরকার ভারতের সঙ্গে দেশবিরোধী চুক্তি করেছে। আমরা পানি চাই, অভিন্ন নদীর পানির হিস্যা চাই। আজকে শেখ হাসিনা সবকিছু উজাড় করে ভারতকে দিয়ে দিয়েছেন। বিনিময়ে বাংলাদেশের মানুষ কিছুই পাইনি। বরং তারা পেয়েছে ঘৃণা এবং তাদের সম্পদ লুট করা হয়েছে। এই সরকার ক্ষমতায় থাকা মানে দেশ ধ্বংস করা। সুতরাং নিজেদের রক্ষা করতে হলে আমাদের আন্দোলন আরও তীব্র করতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া দেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৮১ সালে তিনি জাতীয়তাবাদী দলের পতাকা ও স্বাধীনতা তথা গণতন্ত্রের পতাকা হাতে তুলে নেন। ৯ বছর তিনি রাজপথে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। মিছিলে পায়ে হেঁটে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু কখনো হাল ছেড়ে দেননি। বরং ছাত্রসমাজকে সঙ্গে নিয়ে স্বৈরাচারকে পরাজিত করেছিলেন। বাংলাদেশে গণতন্ত্র মানেই বেগম খালেদা জিয়া। তিনি ১৯৯০ সালে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে এসে অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছিলেন।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাবন্দি করা হয়। তার আগে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সভায় তিনি বলেছিলেন- ‘আমাকে আটক করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলন স্তিমিত করার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু আপনারা থেমে যাবেন না। গণতন্ত্রের আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।’ সেই আন্দোলন এখনো চলছে। অনেকেই অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। ৭০০ এর বেশি মানুষকে গুম করা হয়েছে। কয়েক হাজার মানুষকে বিচারবহির্ভূত হত্যা করা হয়েছে। প্রায় ৪ হাজার নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। অনেক নেতাকর্মীকে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। এই ত্যাগ বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এসবের উদ্দেশ্য হলো দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষকে আটক, নির্যাতন ও করে দেশে চিরদিনের জন্য গণতন্ত্রকে নির্বাসিত করে দেওয়া। তারা করেছেও তাই। তাকিয়ে দেখুন ৩টি নির্বাচন হয়ে গেছে। প্রত্যেকটি নির্বাচনে তাদের দলকে ক্ষমতায় আনার জন্য নানারকম কৌশল করেছে। নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়ে একদলীয় ব্যবস্থা কায়েম করেছে। প্রথমে (২০১৪ সালে) করেছে ভোটারবিহীন। ১৫৪ জনকে বিনা ভোটে সংসদ গঠন করেছে। ২০১৮ সালে ভোটের আগের রাতেই ব্যালট বাক্স তারা চুরি করেছে। এইবার (২০২৪ সালে দ্বাদশ নির্বাচন) আমরা নির্বাচন বর্জন করেছি। পরে তারা নিজেদের লোকদের প্রার্থী বানিয়ে ডামি ইলেকশন করেছে। এই হলো তাদের গণতন্ত্রের নমুনা।