বৃহস্পতিবার , ৯ অক্টোবর ২০২৫ | ২৪শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. অপরাধ
  2. অপরাধচিত্র বিশেষ
  3. অর্থনীতি
  4. আইন-আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. খুলনা
  7. খেলাধুলা
  8. চট্রগ্রাম
  9. জাতীয়
  10. জেলার খবর
  11. ঢাকা
  12. তথ্য-প্রযুক্তি
  13. প্রবাসের কথা
  14. বরিশাল
  15. বিনোদন

হাঁড়ি-পাতিলের ফেরিওয়ালা থেকে জ্যোতিষ রাজ প্রতারণাতেই শতকোটির মালিক লিটন দেওয়ান

প্রতিবেদক
Newsdesk
অক্টোবর ৯, ২০২৫ ৬:৪৭ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

দেশের প্রচলিত আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রতিনিয়তই আইন ভেঙ্গে একশ্রেণির ঠগ নিজেদেরকে বিশেষজ্ঞ পরিচয় দিয়ে সচেতন-অসচেতন মানুষকে প্রতারিত করে নিজেদের আখের গুছিয়ে নিচ্ছেন। প্রতরণার এই নেটওয়ার্কে প্রতারকচক্র সঙ্গী করেন কখনো রাজনীতিবীদ, কখনো প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, কখনো ধর্মীয় আলোচকদের। অসাধারণ এই গোষ্ঠির আশ্রয়-প্রশয়ে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করে ফুলে-ফেঁপে ওঠা এমনই এক ঠগ লিটন দেওয়ান। দীর্ঘদিন সকলের নজরে থেকে, পাশে থেকে, সাথে থেকে সাধারণ মানুষকে ঠকিয়ে বসবাস করছেন আলিশান বাড়িতে, হাঁকাচ্ছেন কোটি টাকার গাড়ি। অপরাধচিত্র প্রতিবেদক ধারাবাহিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করেছেন ।

পর্ব : এক
ফুটপাথ থেকে উঠে আসা লিটন দেওয়ানের গল্প কল্পনাবিলাসী আরব্য রজনীর গল্পকেও হার মানায়। এক সময় নুন আনতে পান্তা ফুরানো অবস্থা থেকে তিনি কাড়ি কাড়ি টাকার মালিক হয়েছেন। প্রতারক লিটনের বাড়-বাড়ন্তের দিকে খেয়াল করলে প্রচ্ছন্ন মিল দেখা যাবে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর “লালসালু” উপন্যাসের। “লালসালু” উপন্যাসে মজিদ নামক এক ভণ্ড পীর তার স্বার্থসিদ্ধির জন্য ধর্মীয় কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসকে ব্যবহার করে নিজের ক্ষমতা ও শোষণের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। লালসালুর আড়ালে মজিদ যেমন একটি কবরকে মাজারে পরিণত করে লিটন তেমনি হাঁড়ি-পাতিলের ব্যবসা ছেড়ে ভর করে প্রচার-প্রপাগান্ডার উপর। শুধুমাত্র অকর্ষণীয় প্রচারের টোপে গেঁথে ফেলেন টাকাওয়ালা (নির্বোধ) পাবলিকদের। ধুরন্ধর লিটন প্রতারণার পথকে মসৃণ করতে গ্রহণ করেন অভিনব পদ্ধতি। মানুষের মনে গ্রহণযোগ্যতা ও তাঁর প্রভাব প্রতিষ্ঠিত করতে আশ্রয় নেন দেশের রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে মুখচেনা অভিনয় শিল্পীদের। এই পথে লিটনকে যারা সহযোগিতা করেছেন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তারা হচ্ছেন শরিফ-শফিক জুঁটি।

হাঁড়ি-পাতিলের ফেরিওয়ালা থেকে বসুন্ধরা: কাঁধে হাঁড়ি-পাতিলের ভাড় নিয়ে রাজধানীর গলিপথে হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করা লিটনের ফকটাবাজি শুরু হয় যাত্রাবাড়ীর একটি মার্কেটের ছোট্ট এক কমরায়। ৯০ দশকের সূচনা পূর্বে উল্লিখিত শরিফ-শফিক এক সময় যোগ দেয় লিটনের সাথে। শরিফ-শফিক এই জুটি লিটনের নাম বদলে রাখেন ‘পাগল লিটন দেওয়ান’। এরাই পাগল লিটন দেওয়ানের প্রতারণায় সহযোগী হিসেবে আবির্ভূত হয়। দেশের বিভিন্ন পত্রিকায় ‘শেষ দশর্ন’ নামের প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচার প্রপাগান্ডার মাধ্যমে শরিফ-শফিক জুটি লিটনকে ‘পাগল লিটন দেওয়ান’ হিসেবে পরিচিত করে তোলে। যাত্রাবাড়িতে এক অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় লিটন রাতের আঁধারে যাত্রাবাড়ি ত্যাগ করে এক সময় এসে আস্তানা গাড়ে রাজধানীর পলওয়েল সুপার মাকের্টে। এখানে এসেই পাগল লিটন দেওয়ান ফাকটাবাজিতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে। এক সময় প্রতারণার অভিযোগে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেফতার করে লিটন দেওয়ানকে। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর রমনা থানায় ধর্ষনের অভিযোগে মামলা হলেও বিপুল অর্থ-কড়ি খরচ করে সে সময় পার পেয়ে যায় প্রতারক জ্যোতিষ পাগল লিটন দেওয়ান।

বোকাদের মেলায় প্রতারক লিটনের ধান্দাবাজি ফুলে-ফেঁপে উঠলে পলওয়েল সুপার মাকের্ট থেকে চলে যান কাকরাইলের ইর্স্টান কমার্শিয়াল কমপ্লেক্সে। এখানে চোখ ধাধাঁনো ডেকোরেশন করেন তার প্রতারণার কেন্দ্র ‘শেষ দর্শন’কে। প্রতারিতদের তালিকা দীর্ঘ হতে থাকে। লিটন নিজে যেমন বহুগামী তেমনি বহুগামীদের রসদ জোগাতে ‘হাত দেখা’র আড়ালে শুরু করেন সেক্সট্রেড। এই সময় জনৈক ভুক্তভোগীর অভিযোগে ২০০৮ সালের ১৪ আগস্ট প্রতারক লিটন দেওয়ানকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। তার বিরুদ্ধে রমনা থানায় নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয় (মামলা নং ২৯ ও ৩০)। এ সময় লিটন দেওয়ানের দুই সহযোগী জাহাঙ্গীর আলম ও শামীমকেও গ্রেফতার করা হয়। ম্যানেজ মাস্টার লিটন দেওয়ান সবকিছু ম্যানেজ করে মাত্র ১৬ দিনের মাথায় জামিনও পান। জামিন পেয়েই মামলার বাদীদেকেও ম্যানেজ করে ফেলেন। ফলশ্রুতিতে তিনি মামলা থেকে অব্যাহতিও পান। এই সংক্রান্ত একটি লিঙ্ক দেয়া হলো পাঠকদের উদ্দেশ্যে চাইলে এই লিঙ্কে ক্লিক করে দেখতে পারেন যঃঃঢ়ং://ুড়ঁঃঁ.নব/ৎষাঘুরঁঊঁপট।

বদলে ফেলেন নাম: পাগল লিটন দেওয়ান থেকে হয়ে যান জ্যোতিষ রাজ লিটন দেওয়ান চিশ্তী। কাকরাইলের ইর্স্টান কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স থেকে র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ার পর প্রতারণা ব্যবসায় ভাটা পড়লে নাম বদলানোর পাশাপাশি ঠিকানাও বদলে ফেলেন। চলে যান রাজধানীর আলিশান শপিং কমপ্লেক্সে। অসমর্থিত সূত্র জানায়, রাজধানীর এই অভিজাত বিপণি বিতানে তার মালিকানাধীন দোকান রয়েছে অন্তত ১৫টি। এর মধ্যে লেভেল-১ এর ডি ব্লকের ৭০, ৭১, ৭৩, ৭৪, ৮৭ ও ১০০ নম্বর দোকানগুলিতে লিটন প্রতারণার কেন্দ্র খুলে বসেন। শুধু হাত নয় মুখ দেখেই অতিত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ বলে দেয়া প্রতারক লিটন প্রতারণায় জ্যোতিষ নামের আড়ালে শুরু করেন আরেক প্রতারণার ব্যবসা। পাথর বিক্রি। উল্লিখিত দোকানগুলোর মধ্যে দুটি বাদে অন্যগুলোতে জাঁকিয়ে বসে পাথর ব্যবসায়।

২০১৯ সালের ২৯ মে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বসুন্ধরা সিটির কথিত জ্যোতিষরাজ লিটন দেওয়ান চিশতীর ভাগ্য পরিবর্তনের দোকান শেষ দর্শন আজমেরী জেমস হাউজকে জরিমানা করে।
এ অভিযান পরিচালনা করেন ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের তৎকালীন উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মণ্ডল, সহকারী পরিচালক মো. মাসুম আরিফিন ও আফরোজা রহমান। অভিযান পরিচালনাকালে মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘ভাগ্য পরিবর্তনের নামে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। এজন্য বসুন্ধরা সিটিতে লিটন দেওয়ান চিশতীর ‘শেষ দর্শন আজমেরী জেমস হাউস’’কে জরিমানা করা হয়েছে। এসব দোকান চটকদার বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষকে প্রলুব্ধ করে। পাথর বিক্রি করে, স্বামী-স্ত্রীর মিল-অমিল, চাকরি ব্যবস্থায় উন্নতির কথা বলে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে।

ভন্ডামিতে ধর্মের ব্যবহার : প্রতারণার মাধ্যম হিসেবে শুধু ইসলাম ধর্মের স্কলারদের ব্যবহারই করছে না এই প্রতারক, হিন্দু ও বৌদ্ধ পুরোহিতদের দিয়েও প্রপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। মুফতি আমির হামজার কাছে প্রতারক লিটন দেওয়ান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি লিটন সম্পর্কে তার ওয়াজের একটি লিংক উল্লেখ করে বলেন, আমি তার সম্পর্কে ওই লিঙ্কে যা বলেছি তাই আমার বক্তব্য। ওয়াজে মুফতি আমির হামজা বলেন, ‘…কোন কোন দেশ থেকে যেনো আংটি নিয়ে আসে, আংটি হাতে দিলে বউ দু’টো থাকলে না তিনটে হয়। পুরা বাটপার।…. তুই ভালোও করতে পারিস না, মন্দও করতে পারিস না। শুধু রাসুলুল্লাহ (সা.) চুমা দিয়েছে এই কারণে চুমা দেয়া। সে কি করে ভবিষ্যৎ বলে… ভব্যিষৎ জানে একমাত্র আল্লাহ’।

সাধারণ মানুষের বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে লালসালু উপন্যাসের মজিদের মত মানুষ ঠকিয়ে সব সমস্যা সমাধানের আশ্বাসে পাথর বিক্রি করে লিটন অবৈধ পথে কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। প্রতিবেদকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমার টাকায় কোথায় লেখা আছে অবৈধ। আমি মানুষের পকেটের টাকা জোর করে নেই না। তারা স্বইচ্ছায় তাদের টাকা-পয়সা আমাকে দিয়ে যায়। আমি এভাবে যেহেতু টাকা-পয়সা আয় করি আমি জানি কিভাবে আমার সম্পদ রক্ষা করতে হয়। আমার সব সম্পদই বৈধ।

দুদক কি স্বপ্রণোদিতভাবে মামলা করতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে দুদকের এক কর্মকর্তা এ প্রতিবেককে বলেন, ‘হ্যাঁ, দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন) স্বপ্রণোদিত হয়ে দুর্নীতির মামলা দায়ের করতে পারে। দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ধারা ১৭ অনুযায়ী, দুদক যেকোনো অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধানের বা তদন্তের পর নিজের উদ্যোগে বা যেকোনো অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা করতে পারে।

দুদক যেকোনো অভিযোগপ্রাপ্তির পর প্রাথমিক তদন্ত করতে পারে। প্রাথমিক তদন্তে পর্যাপ্ত প্রমাণ ও ভিত্তি পেলে দুদক আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করে। তদন্তে পর্যাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া গেলে দুদক যথাযথ আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করে মামলা দায়ের করে থাকে।

বিপুল সম্পদের মালিক : অন্ধকারের বাসিন্দা লিটন দেওয়ান শুধুমাত্র প্রতারণাতেই হয়েছেন কোটি কোটি টাকার মালিক। এই পথে তিনি শুধু বাটপারি করেছেন এমন নয়। করেছেন ব্ল্যাকমেইল, জড়িয়েছেন হানি ট্রেডেও। লিটন দেওয়ান রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ২০টি ফ্ল্যাটের মালিক। জানা যায়, রাজধানীর ৩, চামেলীবাগে একটি বহুতল অ্যাপার্টমেন্টে লিটনের ৫টি ফ্ল্যাট রয়েছে বিশ বছর আগেও একচিলতে ভিটেবাড়ি ছাড়া কোনো সম্পদ না থাকলেও বর্তমানে লিটন দেওয়ান তার পরিবারের সদস্যদের নামে শ্রীনগরে একর একর কৃষি জমি কিনেছেন। তার পিতার কবরকে কেন্দ্র করে বিশাল মাজার কমপ্লেক্স গড়ে তুলেছেন। উদ্দেশ্য শেষ বয়সে ‘পীর ব্যবসা’ ধরবেন।

সর্বশেষ - রাজনীতি

আপনার জন্য নির্বাচিত

যুবদল কর্মী হত্যায় ডিবির সেই কনক গ্রেপ্তার

সাদিক অ্যাগ্রোতে ফের অভিযান, ৬টি ব্রাহামা গরু জব্দ

৭ মেট্রোপলিটনে নতুন পুলিশ কমিশনার

পচা-নোংরা-নষ্ট রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ফিরতে চাই না : সোহেল তাজ

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ ট্রাস্টির জামিন নামঞ্জুর করে পুলিশে দিলেন হাইকোর্ট

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ ট্রাস্টির জামিন নামঞ্জুর করে পুলিশে দিলেন হাইকোর্ট

সংকট নেই চালের, তবুও বিক্রি চড়া দামে

প্রযুক্তির সহায়তায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে কার্যক্রম বাড়ানো হবে: জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হাইকোর্টে বাতিল

সাবেক ডিআইজি মোল্যা নজরুলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা

নির্বাচনের ঘোষণা কিছুদিনের মধ্যেই শুনবেন : আইন উপদেষ্টা