বৃহস্পতিবার , ২৬ মে ২০২২ | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অপরাধ
  2. অপরাধচিত্র বিশেষ
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. খুলনা
  6. খেলাধুলা
  7. চট্রগ্রাম
  8. জাতীয়
  9. জেলার খবর
  10. ঢাকা
  11. তথ্য-প্রযুক্তি
  12. প্রবাসের কথা
  13. বরিশাল
  14. বিনোদন
  15. ব্যাবসা-বাণিজ্য

নানা সংকটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তবুও জমা ১১৪টি নতুন আবেদন

প্রতিবেদক
Newsdesk
মে ২৬, ২০২২ ৬:০৭ পূর্বাহ্ণ
নানা সংকটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তবুও জমা ১১৪টি নতুন আবেদন

নানান সংকটে আছে দেশের বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। সিকিভাগ শিক্ষার্থীও পাচ্ছে না এ ধরনের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান। অনুমোদন নিয়ে চালু করতে পারছে না অন্তত ৪টি। মামলাজটে আরও ৪টি বন্ধের পথে।

অনিয়মে আরও কয়েকটির দশা করুণ। এছাড়া আর্থিক দৈন্যে অনেকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে হিমশিম খাচ্ছেন। হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বকেয়া আছে।

কয়েকটি দিচ্ছে আংশিক বেতন। করোনাকালে তহবিল সংকটে পড়ে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান ভবন ছেড়ে দিয়ে কোনো রকমে টিকে আছে। এমনকি কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বিক্রি করে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

উপাচার্যসহ শীর্ষ কর্মকর্তা পদে নানা কারণে নিয়োগ দিচ্ছে না অনেক প্রতিষ্ঠান। এরপরও নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পেতে দৌড়ঝাঁপ চলছে।

এই মুহূর্তে অন্তত ১১৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন জমা আছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। পাঁচটির প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজে হাত দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ১৯ মে এমনই একটি প্রকল্প সরেজমিন পরিদর্শন করে এসেছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা।

ইউজিসিসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিদিনই নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রক্রিয়া জানতে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। আর আবেদন জমা দেওয়া ব্যক্তি ও গ্রুপের মধ্যে অন্তত অর্ধশতাধিক জোর তদবিরে ব্যস্ত। কিন্তু প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে ভালো চলছে না, সেখানে নতুন প্রতিষ্ঠান কী করে চলবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান  বলেন, ‘এই মুহূর্তে অন্যতম বড় সংকট হচ্ছে-আমরা তথাকথিত শিক্ষিত বেকার তৈরি করছি। তা না হলে দেশে শুধু ভারতীয়ই ৫ লাখ নাগরিক চাকরি করতেন না। কেননা উচ্চশিক্ষা ও সনদ আছে; কিন্তু চাকরি পাচ্ছে না। আমি মনে করি, পাড়া-মহল্লায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দরকার নেই। মুড়িমুড়কির মতো এভাবে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানের কোনো গুরুত্ব নেই। এর চেয়ে কারও যদি টাকা থাকেই এবং দেশের শিক্ষার জন্য কিছু করতে চান, তাহলে তাদের জন্য সুন্দর বিনিয়োগের স্থান হচ্ছে ভালো স্কুল বা কারিগরি প্রতিষ্ঠান গড়ায় মনোনিবেশ করা। সরকারও বিষয়টি গুরুত্ব দিতে পারে।’

দেশে বর্তমানে ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে চালু আছে ১০০টি। বিগত করোনাকালে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দেওয়া হয়। অনুমোদন নেওয়ার পর নানা জটিলতায় কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি ৪টি।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, সাময়িক সনদের মেয়াদ ৭ বছর। আর অনুমোদন নিয়ে চালু না করা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬ বছর পার করা বিশ্ববিদ্যালয়ও আছে। এছাড়া জটিলতার কারণে আরও ৪টি বন্ধ হয়ে আছে।

আর ঢাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে ৬৪টি। রাজধানীসহ অন্যান্য মহানগরীর অলিগলি ও জেলা পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এত বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় আইন না মানলেও ওইসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না ইউজিসি।

বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০-এর অধীনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়। অনুমোদনের জন্য উদ্যোক্তাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন জমা দিতে হয়। আবেদনের ভিত্তিতে ইউজিসি ইতিবাচক পরিদর্শন প্রতিবেদন দিলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।

ইউজিসি কর্মকর্তারা জানান, সর্বশেষ ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবসহ ফাইল শিক্ষা মন্ত্রণালয় পাঠিয়েছে। এগুলো হচ্ছে চট্টগ্রাম বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি, ঢাকায় মতিঝিলে ডিআইটি অ্যাভিনিউয়ে প্রতিষ্ঠার জন্য ইন্টারন্যাশনাল ইসলামী ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ঝিনাইদহে সৃজনী বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুরে প্রতিষ্ঠার জন্য তিস্তা ইউনিভার্সিটি এবং খাগড়াছড়ি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

এগুলোর মধ্যে প্রথমটি ১৯ মে চট্টগ্রামে গিয়ে পরিদর্শন করে এসেছে ইউজিসির একটি দল। ওই দলের নেতৃত্ব দেন সংস্থাটির সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ। চট্টগ্রাম বিজিএমইএ এটি প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

বিজিএমইএর ঢাকায় একই নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। সেটি অবশ্য ভালো চলছে বলে জানা গেছে। এই ধারণা থেকে ইউজিসি মনে করছে, প্রস্তাবিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ও অনুমোদন পেতে পারে।

দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠানটির অনুমোদন চাচ্ছেন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি কাজী আকরামউদ্দিন আহম্মেদ। তৃতীয়টি এম হারুন অর রশীদ নামে একজন।

আকরামউদ্দিন আহম্মেদ। তৃতীয়টি এম হারুন অর রশীদ নামে একজন।

শেষেরটির নাম সংশোধনের জন্য বলেছে ইউজিসি। কেননা সরকারের জেলায় জেলায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় করার চিন্তা আছে। তাই এই নামটি ওই উদ্দেশে সংরক্ষিত রাখতে চায় ইউজিসি।

আবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, যেসব জায়গায় ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় আছে, সেসব জায়গায়ও নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আবেদন আছে।

এর আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন পেয়েছেন-এমন উদ্যোক্তারাও নতুন করে ভিন্ন জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছেন। আবার সনদ ও শিক্ষাব্যবসার দায়ে দুষ্ট ব্যক্তিরা অপরের ওপর ভর করে বিশ্ববিদ্যালয় নিতে চাচ্ছেন।

নতুন আবেদনের মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে-শেখ হাসিনা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি। সাবেক সংসদ-সদস্য ডা. এইচবিএম ইকবাল এটি কিশোরগঞ্জে স্থাপন করতে চান।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের স্ত্রী ফৌজিয়া আলম করেছেন ‘লালন বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার আবেদন। আওয়ামী লীগের সংসদ-সদস্য আ স ম ফিরোজ পটুয়াখালীতে ‘সাউথ রিজন ইউনিভার্সিটি’ স্থাপন করতে চান।

আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ-সদস্য শামসুল আলম ভূঁইয়া অ্যাপোলো ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি নামে চাঁদপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় চেয়ে আবেদন করেছেন। আর উত্তরা ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ইয়াসমিন আরা ‘ইউনিভার্সিটি অব বগুড়া ট্রাস্ট’ স্থাপনের আবেদন করেছেন।

করোনা দুর্যোগের মধ্যে তিনটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন হয়। এগুলো হলো-ঢাকার উত্তরায় ‘মাইক্রোল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’, সিলেটে ‘আরটিএম আল-কবির টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি’ ও কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় ‘শেখ হাসিনা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’। এর মধ্যে শেষেরটি গত বছরের সেপ্টেম্বরে অনুমোদন পায়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় কোনো না কোনোভাবে আইন লঙ্ঘন করছে। বর্তমানে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের কয়েক সদস্যের বিভিন্ন অনিয়ম আর দুর্নীতির বিষয়টি ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’।

তাদের মধ্যে চারজনকে তো সোমবার জেলেই যেতে হয়েছে। এমন নানা অপরাধের কারণে গত কয়েক বছরে ইউজিসি অন্তত ৩টি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সুপারিশ করেছে।

এগুলো হচ্ছে-ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, টাইমস ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি। অনুমোদন নিয়েও চালু না করা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে-নারায়ণগঞ্জের রূপায়ণ একেএম শামসুজ্জোহা বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৬), রাজশাহীতে আহ্ছানিয়া মিশন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৮), রাজশাহী শাহ মখদুম ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটি (২০১৮), ঢাকায় মাইক্রোল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (২০২০)।

মামলার কারণে বন্ধ চারটি হচ্ছে-কুইন্স, দ্য কুমিল্লা, আমেরিকা বাংলাদেশ এবং ইবাইস ইউনিভার্সিটি। সংশ্লিষ্টরা জানান, এ মুহূর্তে ৩৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈধ কোনো উপাচার্য নেই। আর উপ-উপাচার্য নেই ৭৬ এবং কোষাধ্যক্ষ নেই ৪৫ বিশ্ববিদ্যালয়ে।

অননুমোদিত ক্যাম্পাস ও ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম এবং অননুমোদিত প্রোগ্রাম পরিচালনা করা বিশ্ববিদ্যালয়ও আছে। এছাড়া বিওটি নিয়ে দ্বন্দ্ব তো লেগেই আছে বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে। বড় ধরনের আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে পারিবারিক বিশ্ববিদ্যালয় অন্তত এক ডজন। মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান আছে।

ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমোদনের সঙ্গে ইউজিসি কোনোভাবে জড়িত নয়। আমরা শুধু প্রস্তাব ধরে আইনের আলোকে বাস্তবে পরিদর্শন করে প্রতিবেদন পাঠাই। তবে এটা ঠিক যে, কয়েকটি অনুমোদন নিয়েও চালু করেনি।

ওইগুলোর অনুমোদন বাতিল করা উচিত। পাশাপাশি কিছু প্রতিষ্ঠান দোকানের মতো খুলে বসেছে। দূরত্বের কারণে ঢাকার বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা সম্ভব হয় না। এগুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

জানা যায়, গত কয়েকদিনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তিনটি চিঠি দিয়ে তথ্য তলব করেছে ইউজিসির কাছে। এর একটিতে মামলাসংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হয়েছে। তাতে মামলার জোরে কটি প্রতিষ্ঠান চলছে তা জানতে চাওয়া হয়।

আরেকটিতে অনুমোদন নিয়ে চালু না করা প্রতিষ্ঠান এবং সাময়িক সনদের মেয়াদোত্তীর্ণ ও স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়া প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ - জাতীয়