কক্সবাজার প্রতিনিধি :
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা ফের অনিয়ম—দুর্নীতির আখঁড়ায় পরিণত হয়েছে। বর্তমান অবস্থায় কমিশন ও ঘুষ ছাড়া ফাইল নড়েনা। ফাইলের কাজ শুরুর আগে কমিশন ও ঘুষের অংক নির্ধারণ করতে হয়। ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ পাওয়া স্বপ্নে মতো। মাসের পর মাস জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে ক্ষতিগ্রস্তরা যাওয়া—আসা করলেও ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। মেলেনা ক্ষতিপূরণের টাকা। কিন্তু দালালদের মাধ্যমে কাজ করলে খুব কম সময়ে অধিগ্রহনের টাকা উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে।দালাল সিন্ডিকেটকে দিতে হয় ৫০% কমিশন। কমিশনের পর চেক।
দালাল রনি, এলও ২ শাখার অফিস সহকারী ফাওয়াজ মোহাম্মদ রিমন, এবং সাবেক সার্ভেয়ার বাকীরুল ইসলামকে কমিশন কান্ডে যদি কোনো জমির মালিক রাজি না হতেন, তখন তিনি ক্ষতিগ্রস্ত মালিকের ফাইল ছিড়ে ফেলবেন অথবা গায়েব করার হুমকি দেন। শুধু তাই নয়, তাদের কথা মতো আপোষ না হলে মরণের আগ পর্যন্ত ক্ষতিপূরণের চেক পাবে না বলেও হুমকি দেন। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের সাথে অসদাচরণসহ বেপরোয়া কর্মকান্ড চালাতেন।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, মহেশখালী উপজেলার ঝাপুয়া মৌজার বিএস ১৪৭ খতিয়ানের ১.২০ একর জমির মালিক ছৈয়দ আহমদের ওয়ারিশগণই প্রকৃত দাবীদার। ছৈয়দ আহমদ মৃত্যুর পর তার দুই পুত্র মাহবুব আলম, আব্দুল মজিদ , ও এক কন্যা রেহেনা বেগম এবং স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস এই সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হন। ভুক্তভোগী পরিবার ও সুত্রে জানা যায়, ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তার কার্যালয়ে বি.এস.-১৪৭ নং খতিয়ানের রোয়েদাদ সংক্রান্ত পরপর চারবার শুনানি হয়। চারবারই ছৈয়দ আহমদের ওয়ারিশগনকে চেক প্রদান আদেশ দেয়। ২০-২-২০২৫ সনে শেষ শুনানিতে উভয় পক্ষকে তাদের স্বপক্ষীয় কাগজপত্র জমা দিতে বলা হয়েছিল। ছৈয়দ আহমদের ওয়ারিশগণ তাদের যাবতীয় কাগজপত্র ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তার কাছে জমাও দেন। অভিযোগ অনুযায়ী, উভয় পক্ষের কাগজপত্র পর্যালোচনা করে আবারও ছৈয়দ আহমদের ওয়ারিশগনকে চেক প্রদানে আদেশ জারি করে। খতিয়ানে ১.২০ একর জমির মালিক হলেও তারা ৯০ একর জমির টাকা উত্তোলন করেন বাকি ৩০ একর জমিতে কোর্টে মামলা চলমান থাকায় চেক নেয়নি।
কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নিজাম উদ্দিন আহমদ আদেশ জারির পর অধিগ্রহণ শাখা ছৈয়দ আহমদের ওয়ারিশগনকে ৭৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৩ টাকার চেক প্রদান করেন। টাকা উত্তোলনের পর প্রতিপক্ষ অধিগ্রহণ কর্মকর্তা আরিফকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে উত্তোলন করা টাকা ফেরত দিতে একটি নোটিশ দেয়। যা জমির প্রকৃত মালিককে এবং অধিগ্রহণ কর্মকর্তার দ্বিমুখী ঘুষ বাণিজ্য বলে জানান ভুক্তভোগী পরিবার।
উল্লেখ্য যে বিএস ১৪৭ নং খতিয়ানে মোট জমির পরিমাণ ৩.৬৯ একর। মালিক তিনজন। আব্দুর রহমানের ওয়ারিশগন সহ আরও একজন সম্পূর্ণ চেকের টাকা উত্তোলন করেছে। অভিযোগ উঠেছে, এলও এটিএম আরিফের ঘুষের টাকা ইচ্ছা মত না হলে,তার ইচ্ছা মত হতে যা করার করেন তিনি।এতে জমির প্রকৃত মালিকগন সীমাহীন ক্ষতিগ্রস্ত এবং হয়রানির স্বীকার হয়। অধিগ্রহণ কর্মকর্তা এটিএম আরিফের কাছে ফাইল যেতে প্রথমে তার নিয়োগ করা দালাল রিমন, সাবেক সার্ভেয়ার রাকীরুল ইসলাম ও দালাল রনির কাছে যেতে হয়। সেখানে তাদের ইচ্ছা মতে কমিশন নামের দালালি নিয়ে চেক হয়। অন্যথায় চেক হয়না বলে একাধিক ভুক্তভোগী পরিবার জানিয়েছেন।
ভূক্তভোগীদের অভিযোগ, এলও শাখার অফিসের ভিতরে ও বাইরে রয়েছে একাধিক দালাল চক্র। এসব দালাল চক্রের মাধ্যমে ঘুষ না দিলে কোন কাজই করেন না এলএ, সার্ভেয়ার ও অন্যান্যরা।কক্সবাজার ভূমি অধিগ্রহণ অফিসের কর্মকর্তাদের যোগসাজশ এবং সরকারি অর্থ লোপাটে তাদের প্রত্যক্ষ ভূমিকার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এ ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবি জানিয়েছেন একাধিক ভুক্তভোগি পরিবার। সাবেক সার্ভেয়ার বাকীরুল ইসলামও অফিস সহকারী রিমন, দালাল রনির হাত ধরে ফাইল জমা হয়েছে স্বীকার করেছে। রিমন এ বিষয়ে বড় অনিয়মের সাথে তার সম্পৃক্ততা আছে কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি স্থান ত্যাগ করে দায় এড়ানোর চেষ্টা করেন।
এবিষয়ে এলও-২ ও এলও-৩ শাখার এলও কর্মকর্তা এটিএম আরিফ কল দিলে তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( রাজস্ব) নিজাম উদ্দিন আহমদকে ফোন দিলে বার্তা দিয়েও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, আমাকে সব তথ্য দিলে আমি ব্যবস্থা নিব বলে জানিয়েছেন তিনি।

















