নিজস্ব প্রতিবেদক :
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় সব আসামিকে খালাসের বিরুদ্ধে আপিলের রায়ের জন্য আগামী ৪ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ৬ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ রায়ের জন্য এই দিন ধার্য করেন।
এর আগে হাইকোর্টে খালাসপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও বিএনপির সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের খালাস বাতিল চেয়ে শুনানি শেষ করে রাষ্ট্রপক্ষ।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে ওই গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এ হামলায় আওয়ামী লীগের ২৪ নেতাকর্মী নিহত হন। ঘটনার পর হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়।
এ ঘটনায় করা মামলায় ২০১৮ সালে বিচারিক আদালত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা সংক্রান্ত দুটি মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বিএনপির সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এদের মধ্যে ১৪ জন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) নেতা-কর্মী। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম ও হুজির সাবেক আমির শেখ আবদুস সালাম ২০২১ সালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ আরও ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, আর ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। এরপর ওই বছরই হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স আসে। পাশাপাশি দণ্ডিত কারাবন্দিরা আপিল করেন।
ঘটনার ১৪ বছর পর বিচারিক আদালত এ সংক্রান্ত মামলার (হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইন) রায় দেন। গত বছর হাইকোর্ট ওই রায় বাতিল করে দেন। আসামিদের খালাস দিয়ে হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের ওপর এখন শুনানি চলছে।
এরপর হাইকোর্টে আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন), আপিল, জেল আপিল ও বিবিধ আবেদনের ওপর শুনানি হয়। পরে গত বছরের ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন। তাতে বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজার রায় বাতিল করা হয়। ফলে মামলা থেকে সবাই খালাস পান।
২০২৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়।
এতে বলা হয়, দেশের ইতিহাসে এটা এক জঘন্য মর্মান্তিক ঘটনা, যেখানে আওয়ামী লীগের নেতা আইভি রহমানসহ বহু মানুষ প্রাণ হারান। যারা মারা গেছেন, তাদের প্রতি ন্যায়বিচারের জন্য এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও স্বাধীনভাবে তদন্ত হওয়া দরকার, যা এ মামলার ক্ষেত্রে এখনো সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। যথাযথ ও বিশেষজ্ঞ সংস্থার মাধ্যমে নতুন করে তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে এ মামলা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো উচিত বলে রায়ে এসেছে। হাইকোর্টের এই পর্যবেক্ষণের আলোকে যথাযথ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আদেশের অনুলিপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়।
পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) থেকে রাষ্ট্রপক্ষের উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে চলতি বছরের ১৭ জুলাই আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ৩১ জুলাই, ১৯ আগস্ট ও গতকাল (২০ আগস্ট) শুনানি হয়।
পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে। চলতি বছরের ১ জুন লিভ টু আপিল (বিস্ফোরক মামলায়) মঞ্জুর করেন আপিল বিভাগ। এরপর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) থেকে রাষ্ট্রপক্ষের উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে চলতি বছরের ১৭ জুলাই আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়, যে শুনানি এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। এজন্য ৪ সেপ্টেম্বর রায়ের তারিখ দিলেন আদালত।
